‘১০০ বছর পরেও লোকে লাকী আখান্দের কথা বলবে’

লাকী আখান্দ বাংলা আধুনিক গানের খোলনলচে বদলে দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2017, 08:31 PM
Updated : 22 July 2017, 08:39 PM

এই শিল্পী এখন বেঁচে থাকলে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিপরীতে তরুণদের উত্থানে বড় ভূমিকা রাখতে পারতেন বলে মনে করেন তারা।

শনিবার বিকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে লাকী আখান্দের স্মরণসভায় দুই মন্ত্রী এসব বলেন। তাদের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকও স্মরণসভায় অংশ নেন।

দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগে গত ২১ জুলাই আরমানিটোলার বাসায় মারা যান জনপ্রিয় শিল্পী লাকী আখান্দ। এর তিন মাস পর এই নাগরিক স্মরণসভার আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি।

লাকী আখান্দকে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি  অঙ্গনের ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’ অভিহিত করে হাসানুল হক ইনু বলেন, “সংগীতে তার দক্ষতা-পারদর্শিতা ও জ্ঞান তাকে করে তুলেছিল অনন্য ও বিরল প্রতিভাধর। একাধারে গায়ক,  গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি।সংগীতের জন্যই তার জন্ম, সেই সংগীতকে বুকে নিয়েই পরপারে চলে গেলেন।

“লাকী আখান্দ বুকে নীল মণিহার নিয়ে গাইলেন ‘আমায় ডেকো না’। কিন্তু আমরা তো ডাকবই তাকে। ১০০ বছর পরেও লোকে লাকী আখান্দের কথা বলবে।”

মাত্র ১৫ বছর বয়সে লাকী আখান্দ যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে।

মুক্তিযোদ্ধা এই শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ইনু বলেন, “সত্যিকারের শিল্পীরা কখনও অন্যায়ের সঙ্গে নির্লজ্জ আপস করেন না। তারা প্রতিবাদ করেন।

“লাকী আখান্দ সেই দেশ, ভাষা আর জাতির জন্য উদাসীন ছিলেন না। আমৃত্যু তিনি বাংলাদেশপন্থি ছিলেন।”

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর জানান, আশির দশকে বিটিভির এক নাটকে লাকী আখান্দের ‘নীল মণিহার’ গানটির মাধ্যমে গড়ে ওঠে সখ্য। বয়সে দশ বছরের ছোট হলেও তা বন্ধুত্বের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাদের মধ্যে।

ছবি-পিআইডি

নূর বলেন, “এক সময় বাংলা গানে যখন ভাটা নেমে এল, গানের লিরিকে কাব্যিক ব্যঞ্জনা হারিয়ে গেল, সুরে ছিল জোড়াতালি, তখন লাকী আখান্দ নিয়ে এলেন অসাধারণ সব গান আর সুর। আধুনিক গানের আধুনিকতা নিয়েই তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মেতে উঠলেন।

“লাকী আখান্দের দৈনন্দিন জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, তার মধ্যে শিল্প সৃষ্টির এক যন্ত্রণা ছিল। তার মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না কখনও। কিন্তু সৃজনশীলতার জন্য তার ছিল অসম্ভব যন্ত্রণা।”

“তার মতো সৃজনশীল মানুষরা সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ও উত্থানের বিপরীতে তরুণদের উদ্বুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করতে পারতেন,” বলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।

পরে তথ্যমন্ত্রী ও সংস্কৃতিমন্ত্রী দুজনেই জানান, লাকী আখান্দের স্মৃতি ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগের পাশে থাকবে তাদের মন্ত্রণালয়।

মেয়র আনিসুল হক শোনান লাকী আখান্দের সঙ্গে কাটানো শেষ দিনগুলোর কথা।

তিনি জানান, বিএসএমএমইউয়ে লাকীকে দেখতে গিয়ে সবাই একসঙ্গে গেয়েছিলেন তার সব প্রিয় গান।

আনিসুল হক বলেন, “সেদিন লাকী আমার হাত ধরে বলেছিল, দোস্ত রে বাঁচতে চাই, আমি আরও গান গাইতে চাই।”

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীও পরে স্মৃতিচারণ পর্বে অংশ নেন।অনুষ্ঠানে লাকী আখান্দের জীবনভিত্তিক একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।

লাকী আখান্দের বাল্যবন্ধু ফেরদৌস ওয়াহিদ গেয়ে শোনান লাকীর ‘আগে যদি জানতাম’ ও ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গান দুটি।

সবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাকী আখান্দের সুর করা তার জীবনের শেষ গানের ভিডিওচিত্র প্রদর্শত হয়।