শুক্রবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে ভূমিধস: কারণ, ফলাফল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়াদি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মত তুলে ধরেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, “দুর্যোগ মোকাবেলায় সফল দেশ হিসেবে আমরা পরিচিতি লাভ করেছি। পাহাড় ধসে সম্প্রতি যে প্রাণহানি ঘটেছে, তা দুঃখজনক। প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করে সহাবস্থান ও উন্নয়ন করতে হবে।
“গত চারদশক ধরে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। আদিবাসীদের জীবনমান ধ্বংস করা হচ্ছে, তারা প্রকৃতি ও পাহাড়কে রক্ষা করে বসবাস করে। প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংস করা যাবে না।”
চলতি মৌসুমের শুরুতে কয়েকদিনের টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকার কয়েকটি স্থানে ধস দেখা দেয়। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় দেড় শতাধিকে, যা ২০০৭ সালের হতাহতকেও ছাড়িয়ে গেছে।
গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষায় পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস ঘটছে এবং তাতে প্রাণহানিও হচ্ছে। শুক্রবারেও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভারি বৃষ্টির পর পাহাড় ধসে তিন শিশুসহ অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
পাহাড় ধসের প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণগুলো নির্ধারণ করে ভবিষ্যতে সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে আশ্বস্ত করেন পর্যটনমন্ত্রী।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা, বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ-চায়না কালচারাল অ্যান্ড ইকোনমিক সেন্টার ও ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের যৌথ আয়োজনে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “ভূমিধসের জন্য বিশ্বব্যাপী বৃষ্টিপাতকে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের ভূমিধসের প্রথম রেকর্ড ১৯৬৮ সালের কাপ্তাই-চন্দ্রঘোনা রাস্তা। এই ধ্বসে প্রাণহানি না হলেও পরবর্তী সময় থেকে আজ অবধি ভূমিধসে প্রায় ৪৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে এই বছর (চলতি) ১৬০ জন মারা গেছে।”
২০০৭ এবং ২০১৭ সালের ভূমিধস নিয়ে এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভূমিধসের উপর বিস্তারিত গবেষণা শেষে এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে বাংলাদেশে ভূমিধসের কারণ মূলত দুইটি- প্রাকৃতিক কারণ ও মানবসৃষ্ট। প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে পাহাড়ের গঠন ও ঢাল, জলবায়ুতে ঋতুগত পরিবর্তন, ভূমিকম্প এবং অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত অন্যতম।”
২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভূমিধসের পর বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি বলে অভিযোগ করেন অধ্যাপক শহীদুল।
তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ২২টি সুপারিশ করা হয়েছিল। যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহকে চিহ্নিত করা, সমন্বিত ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, সমন্বিত ওয়াটার শেড ব্যবস্থাপনা অন্যতম।
এছাড়া আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ ও ভূমিধস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার দিয়ে একটি শক্তিশালী ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা সেল’ গঠনের সুপারিশও ওই প্রতিবেদনে রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাপার সহ-সভাপতি সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক ড. মাহবুবা নাসরিন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বক্তব্য দেন।
বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মতিন সেমিনার সঞ্চালনা করেন।