বৃহস্পতিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে একান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আগামী সপ্তাহেই ওই গেজেট হতে পারে।
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা ওই গেজেট প্রকাশ নিয়ে নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের টানাপড়েনের মধ্যে গত ১৬ জুলাইও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন আইনমন্ত্রী।
চাকরিবিধির গেজেট বৃহস্পতিবারের মধ্যেই হয়ে যেতে পারে বলে সেদিন তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে বৈঠক শেষে বেরিয়ে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে এবং নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট করার কাছাকাছি চলে এসেছি।”
যেসব বিষয় ‘বোঝার প্রয়োজন ছিল’ এবং যেসব ব্যাপারে ‘দ্বিমত ছিল’ সেগুলো অনেকাংশে ‘দূর হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, “আগামী সপ্তাহেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।”
মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়।
ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত ২৮ আগাস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ।
এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।
এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকার মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই বিধিমালা গেজেট এখনও প্রকাশ করেনি।
সর্বশেষ গত সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আরও দুই সপ্তাহ সময়ের আবেদন করলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের আপিল বিভাগ এক সপ্তাহ সময় দেয়।
সে অনুযায়ী আগামী রোববার মামলাটি আবারও আপিলের কার্যতালিকায় আসতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের শূন্য পদে নিয়োগ বা পুনর্গঠন শিগগিরই হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসা বিচারপতি আনোয়ারুল হক গত ১৩ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন।