জগন্নাথ হলে ‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’ ই-লাইব্রেরি চালু

পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার করার দাবি তোলা প্রথম বাঙালি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে একটি ই-লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2017, 07:48 PM
Updated : 18 July 2017, 07:48 PM

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনে এ গ্রন্থাগারটির উদ্বোধন করেন।

১৯৪৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথম পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলেন। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ হানাদার বাহিনী কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে গিয়ে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। পরে ১৪ এপ্রিল গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে এই রাজনীতিবিদের নামে প্রতিষ্ঠিত ই-লাইব্রেরিটি ছাড়াও এদিন জগন্নাথ হলের প্রথম প্রাধ্যাক্ষ নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের নামে একটি সম্মেলন কক্ষ উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নতুন সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা শুরু হয়।

এতে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের একটি জীবন্ত জাদুঘর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানেই যাবেন, সেখানেই দেখা যাবে- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি। সেগুলো ঘুরে ঘুরে দেখলেও ইতিহাসের শিক্ষা নেওয়া যায়।

“ইতিহাসের চেয়ে বড় শিক্ষার মাধ্যম নেই। ইতিহাস থেকেই আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে।”

শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইতিহাসকে সবসময় নতুন প্রজম্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশেই আমাদের এই কাজটি করা উচিত।

“আমরা আশা করি যে- সারা দেশেই এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের কাজ করে সবসময় নতুন প্রজম্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে সক্ষম হবো।”

‘ই-লাইব্রেরিকে’ বর্তমান যুগের ‘বাস্তবতা’ আখ্যায়িত করে ঢাবি উপাচার্য বলেন, এখনকার তথ্য-প্রযু্ক্তির যুগে শিক্ষার্থীরা ই-লাইব্রেরি ছাড়া জ্ঞান অর্জন করবে, এটা চিন্তা করাই কঠিন।

শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্তকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী।

“বাংলা ভাষায় ধীরেন্দ্র নাথের যে অবদান, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাকে ততটা মর্যাদা দেওয়া হয়নি বা দেওয়া যায়নি।”

ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের নাতনি অ্যারোমা দত্ত বলেন, “যারা শুধু দেশকেই ভালোবাসেন এবং এর বাইরে কখনো অন্য চিন্তা করতে পারেন না তাদের মধ্যে ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ছিল অন্যতম। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের চেতনার অস্তিত্ব, এই বাংলাদেশের গর্ব।”

ধীরেন্দ্র নাথের আত্মজীবনী থেকে নেওয়া কয়েকটি লাইন পাঠ করে তার প্রয়াত দাদুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান অ্যারোমা।

জগন্নাথ হলের প্রাধাক্ষ্য অধ্যাপক অসীম কুমার সরকার আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন।

এতে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মনোজ কুমার বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, হাজী মুহম্মদ মহসীন হলের প্রাধাক্ষ্য নিজামুল হক ভূঁইয়া, জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাস অংশ নেন।