ছাত্রলীগে সংঘাত: সিলেটে খুন; পাবনায় ভাংচুর

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রক্ত ঝরেছে সিলেটের বিয়ানীবাজার কলেজে; ভাংচুর হয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2017, 05:43 PM
Updated : 17 July 2017, 05:51 PM

সোমবার সিলেট ও পাবনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির পাশাপাশি রাজশাহীতে নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজে ছাত্রলীগে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।

সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রাবাস ভাংচুর এবং ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দরপত্র নিয়ে সংঘাতের জন্য সমালোচনার মধ্যেই সোমবার এই তিনটি জেলায় সংঘর্ষে জড়াল সরকার সমর্থক সংগঠনটি।

বিয়ানীবাজারে নিহত ১

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ, যেখানে নিহত হন একজন

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর একজন গুলিতে নিহত হন।

নিহত খালেদ আহমদ লিটু (২৫) বিয়ানীবাজারের কসবা নয়াটিলা এলাকার খলিল উদ্দিনের ছেলে। এলাকায় একটি মোবাইলের দোকান চালাতেন তিনি। লিটু জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক পাভেল মাহমুদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

দুপুরে পাভেলের অনুসারীদের সঙ্গে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লবের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। 

তারা বলছেন, সংঘর্ষের পর লিটুসহ পাভেলের দলের কয়েকজন কলেজের একটি কক্ষে বসে ছিলেন। এমন সময় কয়েকজন যুবক এসে তাদের গুলি করে পালিয়ে যান।

লিটুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা জানান।

এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে জানালেও তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।

এদিকে সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের পর আগামী ২২ জুলাই পর্যন্ত কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথাও জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ দারকেশ চন্দ্র নাথ।

সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে পল্লব ও পাভেলকে ফোন করা হলেও তারা ধরেননি।

এদিকে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাস ভাংচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগের ৩৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ।

শাহপরাণ থানার ওসি আক্তার হোসেন জানান, কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র চন্দ বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে মামলাটি করেন। এতে ছাত্রলীগ নেতা টিটু চৌধুরীসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

পাবনায় সংঘর্ষ-ভাংচুর

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ভাংচুর হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহেদ সিদ্দিকী শান্ত ও সহ-সভাপতি আরাফাত পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।

তারই জের ধরে দুই পক্ষ সোমবার সকালে সংঘর্ষে জড়ায় বলে সদর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান।

তিনি বলেন, “ভোরে আরাফাত পক্ষের লোকজন শান্তর পক্ষের একজনকে মারধর করে। সকাল ১০টার দিকে উভয় পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।”

এ সময় শিক্ষার্থীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সহ-সভাপতি আরাফাত হোসেন বলেন, “বর্তমান সভাপতি শাহেদ ও সাধারণ সম্পাদক ওলীউল্লাহ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বিভিন্ন অপকর্ম করে। তার প্রতিবাদ করলেই তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়। তারা আমার রুমে ব্যাপক ভাংচুরসহ লুটপাট করেছে।”

সভাপতি শান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রিসহ সেবন করেন বলেও অভিযোগ করেন আরাফাত।

তিনি বলেন, মাদকদ্রব্যর বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই আজকে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

“সাধারণ সম্পাদক ওলীউল্লাহর ছাত্রত্ব নেই, তবুও তিন পদ ধরে রেখেছেন। তারা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ করে থাকেন।”

তবে সভাপতি শান্ত মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, “তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমরা সব সময় ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষে। আজকের এ ঘটনার জন্য আরাফাত নিজেই দায়ী। সে বাইরে থেকে ক্যাডার ভাড়া করে এনে শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি আওয়াল কবির জয় বলেন, “আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হলে দোষী ছাত্রলীগনেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

রাজশাহীতে সংঘর্ষে আহত ৫

রাজশাহীতে নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজে সংঘর্ষে আহত একজন

রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।

সোমবার দুপুরে ‘টেন্টে’ বসাকে কেন্দ্র করে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম বাপ্পী এবং সাধারণ সম্পাদক বাইতুল হোসেন তরুর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাঁধে বলে জানিয়েছেন রাজপাড়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান হাফিজ।

তিনি বলেন, “টেন্টে বসা নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই সমর্থকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।”

সংঘর্ষে ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মী এবং সংঘর্ষ থামাতে দিয়ে এক কনস্টেবল আহত হন বলে জানান ওসি।

আহতদের মধ্যে দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে এক অটোরিকশা চালকের স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন হোসেন মোল্লাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারে কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ।

[এই প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিলেট, রাজশাহী, পাবনা ও বরিশাল জেলা প্রতিনিধি]