সোমবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে অনশনে থাকা পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজনের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছেন বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
ইংরেজি বিভাগের ৪২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সর্দার জাহিদুল ইসলাম ও তাহমিনা জাহান তুলি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী পূজা বিশ্বাস, আইন ও বিচার বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী খান মুনতাসির আরমান এবং দর্শন বিভাগের ৪৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ রুদ্র অনশনে রয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক বীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনশনকারী সবাই বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
“এদের মধ্যে জাহিদ ও পূজার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে। তাদেরকে বিকেলের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।”
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আরও তিন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। তারা হলেন- বাংলা বিভাগের ৪২ আবর্তনের নাইমুল ইসলাম মিশো, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৫ আবর্তনের রাতুল খালিদ, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪৫ আবর্তনের শিক্ষার্থী তাসনোভা তাজিন ইভা।
গত ২৬ মে ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার পর উপাচার্য ভবনে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে প্রশাসন ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। এ মামলায় গ্রেপ্তার হন ৪২ শিক্ষার্থী।
পরে এ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে শনিবার দুপুর থেকে অনশনে যান এই দুই শিক্ষার্থী। পরে তাদের সঙ্গে অন্যরা যুক্ত হন।
এসময় তারা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো শুনে উপাচার্যের সাথে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দেন।
পরে অধ্যাপক কৌশিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি, তাদের কথা শুনেছি। এখন আমরা উপাচার্যের সাথে কথা বলবো, তাকে বুঝিয়ে একটি সমাধানের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করবো।”
এদিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রাধ্যক্ষ কমিটির আলোচনা চলার মধ্যেই আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের একটি দল উপাচার্যের কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগে শিক্ষার্থীদের শাস্তি চেয়ে মৌনমিছিল করে।
এদের মধ্যে উপাচার্যের কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠন করা তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক রাশেদা আখতারও রয়েছেন।
এই তদন্ত কমিটির সদস্যের মিছিলে অংশগ্রহণকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আচরণ বলে সমালোচনা করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক নজির আমিন চৌধুরী জয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের শাস্তি চেয়ে করা মিছিলে তদন্ত কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণ পক্ষপাতদুষ্টতার সুস্পষ্ট প্রমাণ। আমরা আগেও একথা বলেছিলাম, এ ঘটনার পরে আবারো বিশ্ববিদ্যালয়ের এ তদন্ত কমিটিকে আমরা প্রত্যাখান করছি।”
মামলার বাদী দিয়ে দ্বিমুখী বক্তব্য
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী কে তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের দ্বিমুখী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হচ্ছেন মামলার বাদী। ওনার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা দায়ের হয়েছে।”
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলাটির বাদী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ না। রেজিস্ট্রার শুধু অভিযোগ করেছিলেন।”
উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে গতকাল বলেছিলেন, “মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। শিক্ষার্থীরা যদি তাদের ওই দিনের (উপাচার্যের বাসভবন ভাংচুরের দিনের) কাজের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে তাহলে আমরা রাষ্ট্রের কাছে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলবো, তাছাড়া না।”
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ বলেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক নজির আমির চৌধুরী জয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা চাইলেই যে বিষয়টা সমাধান করতে পারেন, সেটা তারা আরো জটিল করে তুলছেন। এখন শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হলে তার দায় উপাচার্যকেই নিতে হবে।