বিচারকদের চাকরিবিধি: আরও এক সপ্তাহ সময়

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষকে আবারও এক সপ্তাহের সময় দিয়েছে আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2017, 08:46 AM
Updated : 20 July 2017, 01:02 PM

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সোমবার দুই সপ্তাহের সময়ের আবেদন করলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের আপিল বিভাগ এক সপ্তাহ সময় দেয়।

গত ২ জুলাই সরকারকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে আপিল বিভাগ বলেছিল- এটাই ‘শেষ সুযোগ’।

আপিল বিভাগ এর আগেও কয়েকবার ‘শেষ সুযোগ’ উল্লেখ করে সময় দিয়েছে; তারপরও রাষ্ট্রপক্ষ দফায় দফায় সময় নিয়েছে।

সোমবার সকালে অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চেয়ে লিখিত আবেদন করলে প্রধান বিচারপতি তাকে বলেন, “সব সময় মনে রাখবেন, সরকার এবং প্রধান বিচারপতির মধ্যে ব্রিজ হলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।”

এরপর সময় আবেদনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “নট দিস উইক।”

এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রোববার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা একান্তে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিধিমালার গেজেট বৃহস্পতিবার নাগাদ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আমরা সব ধরনের আলাপ-আলোচনা করছি, যেটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে সেটাই হবে।”

বৃহস্পতিবার বিকালে আবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসবেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয়, বৃহস্পতিবার নাগাদ সম্পন্ন হয়ে যাবে।”

ঘটনাক্রম

মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়।

ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত ২৮ আগাস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ।

এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকার মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ না করায় গত ৮ ডিসেম্বর দুই সচিবকে তলব করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

দুই সচিবের হাজিরার আগে ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি নোটিসে বলা হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি ‘সিদ্ধান্ত’ দিয়েছেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক পরদিন আদালতের তলবে হাজির হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিধিমালা নিয়ে “রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে।”

সেদিন শুনানি করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয় আপিল বিভাগ। এরপর আরও ১২ দফায় প্রায় আট মাস সময় পেয়েছে সরকার।

বার বার সময়ের আবেদনে বিরক্তি প্রকাশ করে গত ৮ মের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন রাখেন- সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটি ফাইল বঙ্গভবন ও গণভবনে যেতে কতদিন সময় লাগে?