থানা হাসপাতাল বাজার বাসে অন্তত ‘৩০% নারী’ হয়রানির শিকার

থানা, হাসপাতাল, বাজার ও বাসে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নারী প্রতিনিয়ত নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে অ্যাকশনএইডের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2017, 05:08 PM
Updated : 16 July 2017, 05:08 PM

রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মানসম্মত গণসেবা’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়টি তুলে ধরতে এই গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়।

পাঁচটি গণসেবা প্রতিষ্ঠান- পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাজার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতালে নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে গৃহীত উদ্যোগের পরিস্থিতি যাচাই করার লক্ষ্যে খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি বস্তির ৪০০ জনের উপর জরিপ চালিয়ে এই ফল বের করা হয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।

গবেষণায় দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালে ৪০.২ শতাংশ নারী সেবাগ্রহনকারী বলেন যে তারা সেবা প্রদানকারীদের থেকে দুর্ব্যবহারের শিকার ও শতকরা ১৫ জন হাসপাতালে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন।

জরিপকৃত এলাকার ৩০ শতাংশ নারী মনে করেন, পুলিশ স্টেশনে তারা হেনস্তার শিকার হন। ৩৫ শতাংশ নারী পুলিশ সেবা পেতে গিয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান।

এতে আরও দেখানো হয়, শতকরা ৫০ শতাংশ নারী বাজারে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ ও এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন। এছাড়াও ৭০ শতাংশ নারী ও ৭৫ শতাংশ পুরুষ মনে করেন বাস ও বাস স্ট্যান্ড নারীদের জন্য নিরাপদ নয়।

অ্যাকশন এইড বলেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই এবং এসব স্থানে সহিংসতার ঘটনা যথাযথভাবে আমলে নিয়ে সঠিক কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয় না।

এছাড়াও সিটি করপোরেশনগুলোতে নারীদের জন্য আলাদা টয়লেট সুবিধা, মাতৃদুগ্ধ পানের স্থান ও আলাদা বসার জায়গার ব্যবস্থাও করা করা হয়নি।

গবেষণনার ফলাফল নিয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের গণসেবার ধারণাপত্রে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয় বলে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, স্বাস্থ্যখাতে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে মাথাপিছু বাৎসরিক গড় বরাদ্দ, ২৭ ডলার যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক উল্লিখিত দক্ষিণ এশিয়ায় গড় মাথাপিছু বরাদ্দের থেকে ২৫ শতাংশ কম।

জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক নুজহাত জেবিন। প্রতিবেদনের ফল তুলে ধরার পর সংস্থার পক্ষ থেকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংবেদনশীল গণসেবা কাঠামোর প্রস্তাব করা হয়।

সভায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. প্রতিমা পাল মজুমদার গবেষণা প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের পলিসির অভাব নেই, তবে রয়েছে বাস্তবায়নের অভাব। আমাদের দেশের মেয়েরা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ, সমাজ মেয়েদের সুযোগ দেয় না, নিরাপত্তা দেয় না।”

সহিংসতা প্রতিরোধের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

সেবাপ্রধানকারীদের ‘জেন্ডার সেনসিটিভ’ মানসিকতা তৈরি করতে বাধ্যতামূলক জেন্ডার বিষয়ক শিক্ষা দেবার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন প্রতিমা পাল।

সভা পরিচালনা করেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের পরিচালক আসগর আলি সাবরি। এতে সংস্থাটির কর্মীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীর উপর সহিংসতা বন্ধে কাজ করে যাওয়া বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।