কারো ঘরে গিয়েতো মশারি টানাতে পারব না: আনিসুল

রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার জন্য খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিটি করপোরেশনকে দায়ী করলেও সে দায় নিতে রাজি নন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2017, 10:13 AM
Updated : 14 July 2017, 02:50 PM

ঘরের ভেতর জন্ম নেওয়া মশাকে চিকুনগুনিয়ার প্রধান কারণ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, “সবার ঘরে গিয়ে মশা নিধন সিটি করপোরেশনের জন্য কঠিন কাজ।… ড্রেনের মশা চিকুনগুনিয়ার প্রধান কারণ নয়। দয়া করে এটা লিখবেন।”

শুক্রবার চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কার্যক্রম নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন আনিসুল।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক একজন মহামারী বিশেষজ্ঞ ও দুজন কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, চিকুনগুনিয়া রোগের জন্য ঘরের বাইরের মশা নয়, বরং ঘরের ভেতরে জন্ম নেওয়া মশা দায়ী।

কীট-তত্ত্ববিদদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে মেয়র আনিসুল বলেন, “চিকুনগুনিয়ার প্রাইম রিজন ঘরের ভেতরে জন্ম নেওয়া মশা; সে পর্যন্ত পৌঁছানো সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব না।

“আপনার ঘরের ভেতরে গিয়ে আমি মশারি টানাতে পারব না। আপনার চৌবাচ্চায় আমি ওষুধ লাগাতে পারব না। আপনার ঘরের ভেতর সামান্য স্বচ্ছ পানিতে যে মশা জন্মাচ্ছে, সেটা আমি মারতে পারব না।”

করপোরেশনের যেখানে মশা মারার কথা তার চেয়ে বেশি মারা হচ্ছে বলে দাবি করে ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেন, “এরপর আর কি করব বুঝতে পারছি না।”

এ বছর চিকুনগুনিয়া নিয়ে আগাম কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি বলে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন মেয়র আনিসুল।

তিনি বলছেন, পূর্বাভাস থাকলে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হত।

অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান

নগরবাসী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করলেও তাদের এ দুর্ভোগের জন্য সিটি করপোরেশন দায়ী নয় বলে মেয়রের ভাষ্য।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এপিডেমিওলজিস্ট অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান, কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দীন আহমেদ এবং মনজুর এ চৌধুরী মশা নিধনের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

ঢাকায় চিকুনগুনিয়া মহামারীর আকার নিয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে অধ্যাপক মাহমুদুর বলেন, “এখন পর্যন্ত এ রোগের যেভাবে বিস্তার ঘটেছে, যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, তাতে অবশ্যই এটা মহামারী।”

তার বক্তব্য সমর্থন করলেও এটি তাদের ব্যক্তিগত মত জানিয়ে তৌহিদ উদ্দীন বলেন, মহামারী কিনা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তৌহিদ উদ্দীন আহমেদ

এ বছর বৃষ্টিপাত অনেক আগে হওয়ায় চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস আশপাশের দেশগুলো থেকে এসেছে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ভাইরাসটা আশপাশের দেশ থেকে আসে।

“এবছরও দিল্লী, কলকাতা, করাচি এবং শ্রীলঙ্কা- সব জায়গায়ই আমাদের যাতায়াত বেড়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে মশা ছিল বেশি, তাতে রোগ ছড়িয়েছেও বেশি। আর এ রোগ আগে ছিল না বলে আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাও ছিল না। ফলে রোগটা বেড়ে গেছে।”

এ ভাইরাস যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেদিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান।

“চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীকে মশা কামড়ালে সেই মশার মাধ্যমে আরও মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এভাবে মশার মাধ্যমেই এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে এই ভাইরাস ট্রান্সমিশনকে ডিসরাপ্ট করতে হবে। এ কারণে রোগীকে সব সময় মশারির ভেতর আলাদা করে রাখা দরকার।”