এবার ঈদের ছুটি ছিল রোববার থেকে মঙ্গলবার। এর আগে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় আগেভাগেই ঢাকা ফাঁকা হয়ে যায়।
ছুটি শেষে দুইদিন কর্মদিবসের পর আবার শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। ফলে অনেকেই ঈদের ছুটির সঙ্গে ওই দুদিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছেন। ফলে হাতে যথেষ্ট সময় থাকায় যেন ধীরেসুস্থেই ফিরছে মানুষ।
কমলাপুর রেল স্টেশন
বৃহস্পতিবার কমলাপুর স্টেশনে আসা ট্রেনগুলোয় ছিল মোটামুটি ভিড়। রংপুর এক্সপ্রেস, জামালপুর কমিউটার, এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনে ভিড় ছিল বেশি।
সবগুলো ট্রেন সময়মতো স্টেশনে পৌঁছালেও রংপুর এক্সপ্রেস ৪০ মিনিট দেরিতে পৌঁছায়।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টায় কমলাপুরে আসে এগারিসন্ধুর এক্সপ্রেস; এ ট্রেন ছিল যাত্রীতে পূর্ণ।
“অনেক তো মজা করলাম ঈদে। আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। বেশ ভালো সময় কাটিয়েছি। অফিস শুরু হয়েছে গতকাল। গতকাল আসতে পারি নাই। আজ এখান থেকেই অফিসে চলে যাব।”
সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে স্টেশনে আসা সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসে ভিড় খুব বেশি ছিল না। ট্রেনও সময় মতো ছেড়েছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জের একটি স্পিনিং মিলের কর্মকর্তা হাসান ইকরাম। সব মিলিয়ে স্বস্তি ঝরেছে তার কণ্ঠে।
“আমাদের এই ট্রেন সিরাজগঞ্জ থেকে ছাড়ে। সেখানে যাত্রীর চাপ খুব একটা থাকে না। এছাড়া আগামীকাল, পরশু সরকারি ছুটি থাকায় এখনো সবাই আসা শুরু করেনি। এজন্য ট্রেনে যাত্রী খুব একটা ছিল না, আরামে এসেছি। ট্রেন ছেড়েছে সময়মতো, এখানে ঠিক সময়েই এসেছে।”
ছুটি শেষে ভাই-ভাবী আর নিজের স্ত্রীকে নিয়ে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসে করে ঢাকায় ফিরেছেন একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সারোয়ার হোসেন। তার কথাতেও পাওয়া গেল একই সুর।
সারোয়ার বলেন, “ঈদের আগেও অনেক আরামে বাড়ি গিয়েছি। ছুটি শেষ বলে ফিরে এলাম। আবার শুরু হবে কর্মময় জীবন। ফেরার পথেও কোনো ঝামেলা হয়নি।”
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ২০টি ট্রেন কমলাপুরে এসেছে বলে জানান স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী।
তিনি বলেন, “আজকে ঈদের ফিরতি যাত্রার তৃতীয় দিন সকাল থেকেই ট্রেনগুলোয় মোটামুটি ভিড় ছিল। আমরা সবগুলো ট্রেনেই অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করেছি। যেকারণে যাত্রীরা ভালোভাবে আসতে পারছে। কোনো ঝক্কি ঝামেলা হচ্ছে না।”
স্টেশন থেকে যাত্রী তুলতে অতিরিক্ত সময় নেওয়ায় যাত্রা কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
“বিভিন্ন স্টেশন থেকে যাত্রী উঠতে অতিরিক্ত সময় লাগে। যে সময়টা আমাদের টাইম টেবিলে নেই। কোথাও দুই মিনিট স্টপেজ থাকলেও সেখানে ১০-১৫ মিনিটও লেগে যায় যাত্রী তুলতে। সেটার প্রভাবে গাড়িটা বিলম্বে আসে। ছেড়েও যায় দেরি করে।”
বৃহস্পতিবার দেশের পুবাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা বাসেও ভিড় ছিল কম। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ঢাকা ফেরত যাত্রীদের খুব একটা ভিড় দেখা যায়নি।
লক্ষ্মীপুর থেকে আসা যাত্রী আলমগীর হোসেন জানালেন, ঢাকায় ফিরতে কোনো ঝামেলাই হয়নি।
“বাড়ি যাওয়ার সময় তো ব্যাপক ভিড় ছিল। টিকেট পেতেও অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। কিন্তু ফেরার সময় কোনো কষ্ট হয়নি। টিকেট পেলাম চাইতেই। রাস্তায়ও কোনো যানজটে পড়ি নাই। খুব দ্রুতই চলে এসেছি।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ছেড়ে আসা রয়েল পরিবহনের চালক জামাল হোসেন জানান, গাড়িতে ভিড় কম। এজন্য কয়েকটি আসন খালি নিয়ে আসতে হয়েছে। শুক্রবার থেকে মানুষের চাপ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
তবে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই বাসে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় বাড়বে বলে জানান সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম।
“আজ পর্যন্ত তেমন ভিড় ছিল না। তবে বিকাল থেকে এটা শুরু হবে। শুক্র, শনি ও রবিবার লোকজন ঢাকায় আসবে বেশি। অনেকেই অগ্রিম টিকেটের জন্য টিকেট বুকিং দিয়ে রেখেছেন।”
রাজবাড়ি থেকে সৌহার্দ্য পরিবহনের বাসে এসে গাবতলী বাস টার্মিনালে নামেন গাজীপুরের একটি সোয়েটার কারখানার কর্মকর্তা আবু দাউদ।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদে আসা-যাওয়া অনেকটা স্বস্তিদায়ক মনে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এবার ঈদে বাড়িতে যেতে তেমন কোনো ভোগান্তির শিকার হতে হয়নি। টিকেট পেতে কিছুটা কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু ফিরতে সহজে বাস পেয়েছি। রাস্তায় যানজটও ছিল না।”
মাগুরা থেকে আসা ফ্যাশন ডিজাইন টেকনোলজি কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, “ঢাকায় ফিরতে যাত্রীর চাপ ছিল না। সড়কে গাড়ি কম ছিল, সেজন্য রাস্তাও ছিল বেশ ফাঁকা।”
ঢাকা-খুলনা রুটে চলা ঈগল পরিবহনের বাসের চালক জয়নাল আবেদীন জানান, এবার ঈদে যানজট কিছুটা থাকলেও অন্যান্য বছরের চেয়ে কম ছিল।
“ঈদে মহাসড়কে চলাচল করা লোকাল গাড়িগুলোর প্রতি প্রশাসনের বিশেষ নজর থাকলে যানজট কমে যেত,” বলেন তিনি।