১৯৩৪ সালের ২৬ জুন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী।
ঈদুল ফিতরের দুপুরে কামাল লোহানীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে যায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কর্মীরা, তাদের নেতৃত্ব দেন সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন।
তপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশেষ কোনো আয়োজন ছিল না। পরিবারের লোকজন বলতে মেয়ে বন্যা লোহানী ও ছেলে সাগর লোহানীর সঙ্গে কেক কাটেন লোহানী ভাই। উদীচীর শিল্পীরা গেয়ে উঠেন- আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে….”
রাজনৈতিক দলগুলো দুটি ঘটনা নিয়ে ‘নাটক’ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
“লংগদু, রাঙামাটির ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলো নাটক শুরু করে দিয়েছে। রাজনীতিকে নরক বানিয়ে ফেলেছে প্রায়। দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত প্রায়। গণতন্ত্র নেই, সমাজতন্ত্র নেই, ধর্মনিরপেক্ষতাও নেই।”
তিনি বলেন, এসব ঘটনায় উদীচীসহ বাকি সংস্কৃতিকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়া উচিৎ।
“রাজনৈতিক দলগুলোর মতো রাজনীতিতে না জড়িয়ে সাংস্কৃতিক কর্মীদের উচিৎ, সব দিক দিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে সবার কাজ করা উচিৎ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।”
কওমি মাদ্রাসা কখনও দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা বা সিলেবাসকে স্বীকার করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুতেই ছাত্র ইউনিয়নে জড়িয়ে পড়েন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র কামাল লোহানী, সমমনারা গঠন করেন পাইওনিয়ার্স ফ্রন্ট।
ভাষা আন্দোলনের পরের বছর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনের পাবনা আগমন ও মুসলিম লীগের সম্মেলনের প্রতিবাদ থেকে কামাল লোহানী প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হন। এরপর একাধিকবার জেল খাটেন তিনি।
১৯৬০ সালে দৈনিক সংবাদে যোগ দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন কামাল লোহানী। এরপর বিভিন্ন সময়ে কামাল লোহানী দৈনিক আজাদ, দৈনিক পয়গাম, পাকিস্তান ফিচার সিন্ডিকেট, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তা, দৈনিক বঙ্গবার্তা, দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক জনপদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেন।
দুই দফায় সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সম্পাদক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হন কামাল লোহানী।
১৯৮১ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রকাশনা পরিচালক, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৬২ সালে ছায়ানট গঠনের পর তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরে ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন আরেক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্রান্তি।
কামাল লোহানী ৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি একুশের চেতনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীন বাংলা বেতার পরিষদের উপদেষ্টা, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা।
১৯৮৩ সালে কামাল লোহানী সরাসরি জড়িত হয়ে বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা গঠন করেন, এর সভাপতিও হন তিনি। পরে পালন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতির দায়িত্ব।
২০১৫ সালে কামাল লোহানী পান একুশে পদক। তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমির ‘জাহানারা ইমাম পদক’, কলকাতা পুরসভার ‘দ্বিশতবর্ষ সম্মাননা’, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সম্মাননা, রাজশাহী লেখক সংঘ সম্মাননা, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর ক্রান্তি স্মারকসহ অনেক পুরস্কার।