পাহাড়ে সবহারাদের অন্যরকম ঈদ

দুই সপ্তাহ আগে পাহাড় ধসে যারা স্বজন আর ঘর হারিয়েছেন, ঈদের দিন তারা পাশে পেয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক চট্টগ্রামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2017, 01:41 PM
Updated : 26 June 2017, 01:54 PM

সোমবার রাঙামাটি ও কাপ্তাই এলাকার মোট ২২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ঈদ উপলক্ষে খাবার ও  পোশাক বিতরণ করা হয়।

অনেক হারানোর মাঝেও জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগে হাসি ফুটেছে সর্বহারা মানুষগুলোর মুখে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা তাদের ঈদের অন্য সব পরিকল্পনা সরিয়ে রেখে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে সোমবার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যান; ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাইয়েদ তারিকুল ইসলাম ও রাঙামাটির পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী দুপুরে রাঙামাটি বেতার ও রাঙামাটি সরকারি কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

তারপর তারা রাঙামাটি সরকারি কলেজ কেন্দ্রে আশ্রিতদের সঙ্গে বসে দুপুরের খাবার খান।

জেলা প্রশাসক এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা সবার জন্য ঈদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন তাদের জন্য দেওয়া হয়েছে নতুন পোশাক।

এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, “আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে দ্রুত তাদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা।”

গত ১২ জুন রাতে প্রবল বর্ষণে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামসহ দেশের ছয় জেলায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২০ জন মারা যায় রাঙামাটিতে।

জেলা প্রশাসনের হিসাবে শুধু রাঙামাটিতেই পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় দুই হজারের মত। স্থানীয় প্রশাসনের হিসাবে, পাহাড় ধস ও ঢলে কাউখালি উপজেলায় ১৩ জন আদিবাসীসহ মারা গেছে ২১ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সহস্রাধিক বাড়িঘর।

রাঙামাটি  জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও বিএডিসি আশ্রয় কেন্দ্রে যারা আছেন, তাদের সঙ্গে দেখা করেছি আজ। ঈদ উপলক্ষে তাদের শাড়ি, পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি দেওয়া হয়েছে। টেলিভিশন কেন্দ্রে আমরা একসঙ্গে দুপুরে খেয়েছি।”

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত জানান, রাঙামাটিতে ১৯টি এবং কাপ্তাইয়ে তিনটিসহ মোট ২২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে পাহাড় ধসের পর। দুপুরে তাদের খাবারে পোলাওয়ের সঙ্গে ছিল মুরগির মাংস, ডিম, সবজি আর ফল।

বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া শানু আক্তারের বাড়ি ছিল ভেদভেদি মুসলিম পাড়ায়। ঈদের দিন বাড়তি যত্ন পেলেও তাতে বাড়ি ফিরতে না পারার আফসোস ঘোচেনি।  

“আজ সকালে সেমাই দিয়েছে, নতুন কাপড় দিয়েছে, দুপুরে ভালো ভাবার দিয়েছে। কিন্তু বাড়িতে তো নাই, বোঝেনই তো।”

এই নারী বলেন, পুনর্বাসনটা যদি হত তাহলে বেশিদিন আর আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে হত না।