সংসদীয় সীমানায় বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা নেই ইসির

নতুন প্রশাসনিক এলাকা এবং বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোকে যুক্ত করতে হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না আনার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2017, 12:05 PM
Updated : 26 June 2017, 12:05 PM

সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি ১৯৮৪ সালের পদ্ধতিতে আসন বিন্যাসের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা অোমলে নেওয়া হচ্ছে না। বরং নতুন আদমশুমারি প্রতিবেদন না হওয়ায় জনসংখ্যা অনুপাতকে প্রাধান্য দিয়ে দশ বছর আগের মতোই সংসদীয় আসন সংখ্যা বজায় রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।সব মিলিয়ে অন্তত দুই ডজন আসনে ছোটোখাটো পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাংবিধানে প্রশাসনিক সুবিধা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জনসংখ্যার বিভাজনকে যতদূর সম্ভব বিবেচনায় নিয়ে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী জাতীয় সংসদের আসনগুলোর সীমানা পুনর্বিন্যাসের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত কার‌্যক্রম এ বছরের অগাস্ট থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে করার পরিকল্পনা রয়েছে।সেই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে করা সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তির আবেদনগুলো পর‌্যালোচনা করে নিষ্পত্তি করবে কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পাঁচ বছরে নতুন উপজেলা, পৌরসভাসহ সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদে কিছু প্রশাসনিক এলাকাযুক্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও ভাঙনও হয়েছে। আবার ছিটমহল বিলুপ্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংসদীয় আসনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

“এখন পর্যন্ত বড় পরিসরে সংসদীয় আসনের ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছি না। কিছু এলাকায় ছোটোখাটো পরিবর্তন আসবে। নতুন আদমশুমারি প্রতিবেদনও নেই। তাই আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে নতুন এলাকাগুলোকে যুক্ত করে সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস করতে হবে।”

১৯৮৪, ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। ওই বছর নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৩৩ আসনে সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব করে ইসি। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদার কমিশন সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার আনুপাতিক হার মেনে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে জিআইএস পদ্ধতি অনুসরণ করে শতাধিক সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আনে।

এরপর দশম সংসদে নির্বাচনে ৮৭ আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয় আর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন আগের ইসির পদাঙ্ক অনুসরণ করে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনে।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০০৮ সালে যে সীমানা পুননির্ধারণ করা হয়েছিল তা অনুসরণ করেই কোথাও আসন সংখ্যা বাড়ানো বা কমানোর পরিকল্পনা নেই বলে জানান ইসি সচিব।

মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, “সামনে সংলাপ রয়েছে দলগুলোর সঙ্গে। তাদের মতামত নেওয়া হবে; পাশাপাশি ইসির প্রস্তাবের পর দাবি-আপত্তির সুযোগ দেওয়া হবে। সবকিছু পর্যালোচনা করেই কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”

গেল সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার জোটের অধিকাংশ শরিক এবং জাতীয় পার্টি নবম সংসদের মতো আসন চেয়েছিল।বিএনপি কোনো মত দেয়নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে তাদের মতামত জানিয়ে এসেছে। দলটি নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে আসন পুনর্বিন্যাসের সমালোচনা করে ১৯৮৪ সালের মতো সংসদীয় আসন রাখার প্রস্তাব দিয়েছে।

ইসি সচিব জানান, দশ বছর পর পর আদমশুমারি প্রতিবেদন হয়। ২০২১ সালে প্রতিবেদন হলে নতুনভাবে বড় আকারে পুনর্বিন্যাস হতে পারে।

সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৬ জুলাই প্রকাশিত পঞ্চম আদমশুমারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার।

সীমানা বিন্যাস

>>১৯৭৩থেকে২০০১সালপর্যন্তসীমানানির্ধারণমোটামুটিএকইপদ্ধতিতেহয়।২০০৮সালেসীমানানির্ধারণেজনসংখ্যারঘনত্বকেপ্রাধান্যদেয়াহয়েছিল।

>> ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচন পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সীমানা অনুযায়ী ভোট হয়।

>> দেশের প্রথম আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে কয়েকটি জেলার আসন সংখ্যা কমিয়ে-বাড়িয়ে করে ১৯৭৮ সালে নতুন সীমানা হয়। তাতে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।

>> দ্বিতীয় আদমশুমারির প্রতিবেদনের পর তৃতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৯৮৪ সালে বৃহত্তর ছয় জেলায় ছয়টি আসন কমিয়ে বৃহত্তর তিন জেলায় পাঁচটি ও পার্বত্য এলাকায় একটি আসন বাড়ানো হয়। সে সময় বড় জেলাগুলোকে ভেঙে ৬৪ জেলা করা হয়।

>>১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি আন্তঃজেলা নির্বাচনী এলাকা সৃষ্টি করা হয়।

>> ২০০১ সালের আদমশুমারির পর জনসংখ্যার ভিত্তিতে নবম সংসদে ১৩৩ আসনে সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়।

>>কোনো জেলার আসনসংখ্যা দুটির কম হবে না, পার্বত্য তিন জেলায় একটি করে এবং ও ক্ষুদ্র জেলা মেহেরপুরে দুইটি আসন বরাদ্দ রাখা হয়। ঢাকায় ১৩টি থেকে আসন হয় ২০টি।

১৯৮৪ তে ফেরা সম্ভব?

বিএনপির দাবি অনুযায়ী ১৯৮৪ সালের সংসদীয় আসনে ফেরার যৌক্তিকতা এখন আর নেই বলে মনে করেন ইসি কর্মকর্তারা।

তারা জানান, এখন জনসংখ্যা বেড়েছে এবং জেলা ওয়ারি আসনবন্টনও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রয়েছে। এ অবস্থায় আসন সংখ্যা কম-বেশি করার মতো পরিস্থিতি নেই। বরং কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার আগে বিএনপির তাআরও পর‌্যালোচনা করা উচিত ছিল বলে মনে করেন তারা।

কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, “২০১৭ সালে এসে ১৯৮৪ এর মতো হুবহু সীমানা পুননির্ধারণ করা অনেকটাই অসম্ভব মনে হচ্ছে। তবে দলগুলোর প্রস্তাবনা পর‌্যালোচনা করে এ সংক্রান্ত কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। ইসি সব দলের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাবে।”

গত ১৯ জুন বিএনপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর পর সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, “আমরা এই মুহূর্তেই বলতে পারব না যে, আমরা ৮৪তেই থাকব, তা ২০০৮ এ যেটা ছিল সেটায় থাকব, নাকি ২০১৪’র নির্বাচনে যেটা ব্যবহার করা হয়েছে সেটা ব্যবহার করব। তবে হ্যাঁ, সীমানা পুননির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা পরিবর্তন আনতে চাই,কাজেই এই মুহূর্তেই ৮৪ সালে ফিরে যাব এটা বলা যাবে না। আমরা চিন্তা ভাবনা করব।”