‘আগে নিরাপত্তা, পরে ঈদ’

জাতীয় ঈদগাহের সামনের রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়ছে মুসল্লিরা; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তিনজন পুলিশ সদস্য। তাদের চোখ রাস্তায় মুসল্লিদের মধ্যে।

কামাল তালুকদার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2017, 07:28 AM
Updated : 26 June 2017, 08:04 AM

এভাবে ঈদগাহ ঘিরে জামাতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আরও অনেক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, যারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারছেন না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে ফুটপাতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত তিন পুলিশ সদস্যের একজন এসআই আরশেদ আলী।

ঈদের নামাজ পড়েছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে উত্তরে তিনি বলেন, “আগে নিরাপত্তা, পরে নামাজ। সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ার ইচ্ছা আছে।”

সকাল সাড়ে ৮টার দিকের জাতীয় ঈদগাহের ওই জামাতে এত মানুষের মাঝে নামাজ পড়ার ইচ্ছা জাগে কিনা জানতে চাইলে আরেক পুলিশ সদস্য নুরুজ্জামান বলেন, “নিরাপত্তার কাছে ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কোনো স্থান নেই। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে পারলেই খুশি।”

নামাজ শেষে জাতীয় ঈদগাহর প্রধান ফটকের সামনে দেখা যায় শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসানকে।

তিনিও নামাজ পড়েননি জানিয়ে পাশে থাকা আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তার জন্য দাঁড় করাচ্ছেন।

আগের বছর বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার পর শোলাকিয়ার ঈদ জামাতেও হামলা হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এবারের ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় কোনো ধরনের ফাঁক না রাখার বিষয়টি ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাগ্রে।

চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জাতীয় ঈদগাহের এক কিলোমিটার দূর থেকে ছিল নিরাপত্তা তল্লাশি; পথে আরো কয়েক ধাপ তল্লাশি, তারপরও মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় ঈদগাহ ময়দানে।

সকাল সোয়া ৮টা দিকে ভেতরে জায়গা নেই বলে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। কাউকে ভেতরে ঢোকার জন্য ভিড় না করার অনুরোধ জানানো হয়।

ঈদের নামাজের জন্য আসা মানুষ কদম ফোয়ারা, জাতীয় প্রেস ক্লাবের দুইপাশের রাস্তা আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিমপাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান নামাজের জন্য।

তবে এত মানুষের নিরাপত্তায় থাকা প্রচুর পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হাতে-গোনা কয়েকজনকে নামাজ পড়তেও দেখা যায়।

পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এ বাহিনীর মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

‘নিরাপত্তার কড়াকড়িতে’ মুসল্লিদের বিরক্তি

নামাজের আগে ঈদগাহে ঢোকার সময় চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে কড়াকড়িতে অনেক মুসল্লিকে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়।

জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু না আনতে আগে থেকে নির্দেশনা ছিল পুলিশের।

জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তা দেখতে এসে শনিবার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদু্জ্জামান মিয়া বলেছিলেন, ঈদগাহের এক কিলোমিটার দূর থেকে তল্লাশি চৌকির পাশাপাশি ঈদগাহের চারিদিকে সাদা পোশাকে ও পোশাকে আরও পুলিশ সদস্য থাকবে।

কোনো ধরনের জঙ্গি হুমকি নেই জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু না আনার অনুরোধ করা হচ্ছে।

নির্দেশনা অনুসরণ করে পুলিশ সদস্যরা জায়নামাজের বাইরে সেটি মোড়ানো কোনো ব্যাগও সঙ্গে নিতে দেয়নি।

হাতে জায়নামাজ মোড়ানো পলিথিন বা ব্যাগটি জায়নামাজ থেকে সরিয়ে রাস্তায় ফেলে দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। আর নারীদের সঙ্গে থাকা ছোট ছোট ব্যাগও রাস্তায় ফেলে দেন।

জায়নামাজ মোড়ানো পাতলা ব্যাগ ফেলে দেওয়ায় অনেককে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশকে জিজ্ঞাসা করতে শোনা যায়, ‘এই পাতলা ব্যাগ নিরাপত্তার জন্য কিভাবে হুমকি হয়, বলুন। আপনারাতো দেখছেন এই ব্যাগ আর ব্যাগটিতো স্বচ্ছ।’

কিন্তু আর্চওয়ের বাইরে থাকা পুলিশ সদস্যরা কোনোভাবে জায়নামাজ মোড়ানো ব্যাগ ভেতরে নিয়ে যেতে রাজি নয়। এনিয়ে অনেককে পুলিশের সঙ্গে বাক-বিতর্কতায় জড়িয়ে পড়তেও দেখা যায়।

এমন কড়াকড়ির বিষয়ে ঈদগাহ প্রধান ফটকের দক্ষিণপাশের রাস্তায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক আব্দুস ছালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু নেওয়া নিষেধ।”

তবে জায়নামাজের সঙ্গে যে ব্যাগ তা নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটবে কিনা জানতে চাইলে ছালামের জবাব, “জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু ভেতরে ঢুকবে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে হলে কর্মরত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক কিলোমিটার দূরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছে। তা ঠিক আছে। কিন্তু প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকার পরও আরও দুই জায়গায় তল্লাশি।

সঙ্গে আসা ছোট্ট ছেলে এতে অস্বস্তিবোধ করেছে জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, “নিরাপত্তার জন্যই কমিশনার স্যারের (ডিএমপি কমিশনার) নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

ঢাকায় প্রায় ৫০০ ঈদ জামাত হয়েছে জানিয়ে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. ইউসুফ আলী বলেন, “পুলিশ সবগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কোথাও কোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি।”