রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন, এই আনন্দ সবার হবে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে প্রতিবছর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় নজরুলের গানের সুরে ‘দোস্ত-দুশমন’ ভুলে, সব ধর্মের মানুষ ‘হাতে হাত মিলিয়ে’।
কিন্তু গত বছর ঈদুল ফিতরের ঠিক এক সপ্তাহ আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ১৭ বিদেশিসহ ২২ জন।
এরপর ঈদের সকালে শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় জামাতের ঠিক আগে আগে পুলিশের চৌকিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন এক নারীসহ চারজন।
ওই দুই হামলার প্রেক্ষাপটে বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে অর্ধশতাধিক জঙ্গি নিহত হয়।
এবারও ঈদে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে সরকার।
ঈদ জামাতে জায়নামাজ ছাড়া কিছু না নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। ঢাকার নিরাপত্তায় ছিল পুলিশ, র্যাব ও আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স।
শেষ পর্যন্ত বড় কোনো অঘটন ছাড়াই ঈদের দিনটি কেটেছে বাংলাদেশে। খানা-পিনা আর গল্প-আড্ডায় ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন সবাই।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ৮০ লাখের মত মানুষ এবার স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে গ্রামে গেছেন।
তিন দিন সরকারি ছুটির আগে শুক্র-শনির সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তির অভিযোগ তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান রোববার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের রঙ।
দেশের কোটি কোটি মুসলমান সোমবার সকালে ঈদগাহে কিংবা মসজিদে ঈদের নামাজ পড়েছেন। বরাবরের মতো এবারও রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত হয়েছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, সকাল সাড়ে ৮টায়।
সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এই জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এ জামাতে অংশ নেয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আভাস দিয়েছিল, ঈদের দিন ঢাকার আবহাওয়া ভালোই থাকবে। সেই পূর্বাভাস ফলে গেছে, ঈদ আনন্দে বাগড়া দিতে আসেনি বৃষ্টি।
তিনি বলেন, “ঈদের আনন্দ নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই ইসলামের মহান আদর্শ। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ- পবিত্র ঈদুল ফিতরে এ কামনা করি।”
সকাল সাড়ে ৯টায় গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিচারপতি এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।
সারা দেশে এবার নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঈদের আনন্দ প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক, সেটাই তার সরকার চায়।
বেলা ১২টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, এবার ঈদে বাংলাদেশের মানুষের মনে ‘আনন্দ নেই’। ঈদযাত্রার পথে দুর্ঘটনা-দুর্ভোগ আর দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে ঈদে ‘উৎসবমুখর পরিবেশ এবার ছিল না’।
বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বেলা ১১টায় বনানীতে দলের কার্যালয়ে একসঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও বিভিন্ন জেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ রোববার ঈদ উদযাপন করেছে।
ঈদ উপলক্ষে সোমবার দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, শিশু পরিবার, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, সেইফ হোম, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশনগুলো ঈদের আগে-পরে কয়েক দিন ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে।