সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রোববার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ায় পরদিন বাংলাদেশেও এই উৎসব হবে বলে ধরে নিয়েছিলেন অনেকে।
ঈদে কী কী রান্না হবে, বাজার থেকে আনার বাকি কী সে হিসাবের সঙ্গে ঘর গোছানোয় ব্যস্ত থেকেছেন গৃহিণীরা। অনেকে ছুটেছেন মার্কেটে শেষ সময়ের কেনাকাটায়।
অন্যদিকে ঈদ উপলক্ষে চার দিন আগে থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে মানুষ ঢাকা ছাড়ায় ব্যস্ত এই নগরী এদিন ছিল অনেকটাই ফাঁকা। তাই ভিড় নেই ইফতার বিক্রি করা হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানগুলোতে।
রোজার শুরু থেকেই ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেল থেকে শুরু করে শহরের অলিগলিতে জমে উঠেছিল ইফতার বিকিকিনি। সামিয়ানা টাঙিয়ে ফুটপাতে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসা অস্থায়ী দোকানগুলোও এরইমধ্যে তল্পিতল্পা গুটিয়েছে।
রোববার রাজধানীর মিরপুর, মহাখালী, ফার্মগেইট, ধানমন্ডি ও গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিকাল ৪টা পেরিয়ে গেলেও রেস্তোরাঁগুলোর আড়মোড়া ভাঙেনি, যেখানে অন্যদিনগুলোতে এ সময় ইফতার বিক্রিতে দম ফেলার ফুরসৎ মেলেনি তাদের। গত দুই-তিন ধরে বিক্রি কমে গেছে বলে জানান রেস্তোরাঁকর্মীরা।
মহাখালীর আমতলীর ‘জল খাবার’ রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা যায় জিলাপি, চপ, রোল আর এক পদের কাবাব সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা।
প্রতিষ্ঠানটির বাবুর্চি দীপক বলেন, “বেচা-বিক্রি নাই, তাই আইটেমও কম বানিয়েছি। ঢাকায় ইফতার কেনার মানুষ কই?"
ধানমন্ডির জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ স্টারকাবাবের সামনেও ভিড় ছিল একদম। পুরো রোজা জমিয়ে ইফতার বিক্রি করে আসা এই প্রতিষ্ঠানটির কর্মী সামাদ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যদিন মাগরিবের আজানের আগেই ইফতার শেষ হয়ে যায়, আজকে সেই তুলনায় মানুষ কম।”
ইফতারের সব পদই কম করে বানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুরো রোজায় নিরামিষ ইফতারের জমজমাট ব্যবসা হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন কচুক্ষেতে। এদিন বিকাল ৫টা গড়িয়ে গেলেও সেখানে ক্রেতার পদচারণা সেভাবে দেখা যায়নি।
নিরামিষ ইফতার বিক্রেতা আব্দুল মজিদ মিয়া বলেন, “অল্প স্বল্প আইটেম বানাইছি, আজকে এমনিতেও মানুষ কম হইব। দোকানের পোলাপাইনও বেশ কয়টা বাড়ি গেছে।”
এই দোকানে ইফতার কিনতে আসা অবসরপ্রাপ্ত এক সামরিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ ইফতারের আয়োজন বাসায় খুবই অল্প, সবাই ঈদের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই হালিম কিনে নিলাম, আবার সামনের রোজায় ভালো ইফতার করব আশা করি।”
বিকালে ফার্মগেইট এলাকাও অন্যদিনের তুলনায় বেশ ফাঁকা ছিল। ঈদের ছুটিতে কোচিংগুলো বন্ধ, তাই ভিড়ও কম।
“আমাদের রেস্তোরাঁ ইফতারে বেশ খালি থাকছে এ কয়েকদিন ধরে। তবে ইফতারের পর মানুষ বাড়ে,” বলেন এ এলাকার কাসুন্দি হোটেলের ম্যানেজার ইকবাল হোসেন।
ফার্মগেইট এলাকার বাসিন্দা মোশতাক আহমেদ ঘুরে ঘুরে জিলাপি খুঁজছিলেন।
“একমাত্র জিলাপিটাই বাইরে থেকে কিনি, আজ একেবারেই মানু্ষের ভিড় নেই, তাই শান্তিমতো কেনা যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “রোজার শেষে ইফতার আর সেভাবে করা হয় না, অনাড়ম্বরভাবেই যায় শেষ ইফতারগুলো।"