ন্যাম ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল নিয়ে এখন সুর নরম সংসদ কমিটির

সংসদ সদস্য ভবনে (ন্যাম ফ্ল্যাট) না থাকলে বরাদ্দ বাতিলের হুঁশিয়ারি সংসদ নেতা শেখ হাসিনার কাছ থেকে এলেও কার্যত সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারছে না জাতীয় সংসদের সংসদ কমিটি।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2017, 03:28 PM
Updated : 24 June 2017, 03:46 PM

একজন মন্ত্রীসহ ৩০ জন সাংসদকে ন্যাম ফ্ল্যাট ছাড়তে গত মে মাসে কমিটি চিঠি দিলে সাড়া দেন মাত্র চারজন।

ওই সময় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চিঠির সন্তোষজনক জবাব পাওয়া না গেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর মাধ্যমে ওই সংসদ সদস্যদের ডাকা হবে।

তবে এক মাসেরও বেশি সময় পরে ওই কমিটির সভাপতি প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদের আমরা চিঠি দিয়েছিলাম তাদের মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন জানিয়েছে, সব সময় না থাকলেও ন্যাম ভবনে তারা অধিবেশনের সময় থাকেন।

“তারা জানিয়েছেন, অন্য সময় বাসা দেখাশোনার জন্য তাদের কেয়ারটেকার থাকে। এখন এটাওতো মানবিক দিক।” 

বরাদ্দ পাওয়া ফ্ল্যাটে অনেক সংসদ সদস্য নিজে না থেকে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও গাড়ি চালকদের রাখেন- এমন খবর বেশ কয়েকবার সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

সংসদ সদস্যদের বসবাসের জন্য রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ ও নাখালপাড়ায় ১০টি ভবনে ২৯২টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়েছে সংসদ সচিবালয়। সংসদ কমিটির প্রাথমিক তালিকায় ৯১টি ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যদের অবস্থান না করার বিষয়টি উঠে আসে।

সেখানে তাদের কাজের লোক, ব্যক্তিগত সহকারী ও গাড়িচালক বসবাস করছেন।পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে ৩০ জনের মতো এমপিকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিলের নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

যে সংসদ সদস্যরা তাদের বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটে থাকেন না, তাদের বরাদ্দ বাতিলের হুঁশিয়ারি আসে গত ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক অনুষ্ঠান থেকে। এরপর বিষয়টি নিয়ে তোড়জোড় শুরু করে সংসদ কমিটি।

তবে এর আগেও বিষয়টি নিয়ে দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছিল সংসদ সদস্যদের। সংসদ কমিটির নথি থেকে জানা যায়, মানিক মিয়া এভিনিউ ও নাখালপাড়ায় ন্যাম ফ্ল্যাটে বরাদ্দ নিয়েও থাকেন না- এমন আইনপ্রণেতাদের বাসা ছেড়ে দিতে গত বছরের ২৬ জুলাই চিঠি দেওয়া হয়। এরপর গত ২৩ এপ্রিল আবারও চিঠি দেওয়া হয়।

সংসদ কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোটিশ পাওয়ার পর কয়েকজন সংসদ সদস্য লিখিত জবাব দেওয়ার পাশাপাশি সরাসরি সংসদ কমিটির সভাপতি ও কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন।কয়েকজন বলেছেন, রাতে অবস্থান না করলেও দিনে মাঝে মধ্যে এসে সময় কাটান। আর রাতে তাদের কর্মকর্তা বা ব্যক্তিগত স্টাফ থাকে। কেউ কেউ নিজের নির্বাচনী এলাকায় বসবাস করেন এবং সংসদ অধিবেশন বা অন্য সময় এসে ফ্ল্যাটে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর বিভাগের একজন সংসদ সদস্য বলেন, “অধিবেশন ছাড়া অন্য সময়তো এলাকায় থাকতে হয়। বাসা ছেড়ে দিলে ঢাকায় এসে কোথায় থাকব? আমি না থাকলে আমার এক কর্মচারী ন্যাম ফ্ল্যাটে থাকে। সে-ই বাসা দেখাশোনা করে। কমিটিকে বিষয়টি জানিয়েছি। এখন দেখি তারা কী বলে।”

ফ্ল্যাট খালি করার বিষয়ে কমিটি নমনীয় হচ্ছে কি না জানতে চাইলে আ স ম ফিরোজ বলেন, “আসলে এ সংসদের মেয়াদ আছে দেড় বছরের মতো। ২০১৯ সালের জানুয়ারির আগেই নির্বাচন হবে। এখন অল্প সময়ের মধ্যে তাদের বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলাটা মানবিক দিক থেকে...।”

সংসদ কমিটির প্রধান বলেন, “নতুন সংসদ বসলে নিয়মটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে বলে ধারণা করছি। তবে একটা বিষয় আমরা জোর দিচ্ছি সেটা হলো, ঢাকায় যাদের বাসা আছে তাদের ফ্ল্যাট ছাড়তে হবে।”

যাদের ঢাকায় বাসা আছে তাদের কেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে দেওয়ার সময় এত চিন্তা করা হয়নি। তাছাড়া খালি বাসা পড়ে থাকলে নষ্ট হবে। এসব চিন্তা থেকে দেওয়া হয়েছিল।”

তবে কয়েকজন সংসদ সদস্য তাদের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছেন বলে জানান ফিরোজ।