‘একদিন কমই খেলাম, বাড়ি যেতে পারলেই খুশি’

ঈদের আগে আর কর্মদিবস না থাকায় শুক্রবার ঢাকার টার্মিনাল-স্টেশনে নামে ঘরমুখী মানুষের ঢল, সন্ধ্যার আগে-পরে গাবতলী ছেড়ে যাওয়া যাত্রীরা টার্মিনাল বা পথেই সেরে নেন ইফতার।

রিফাত রহমানসাজিয়া আফরিন ও , নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2017, 08:37 PM
Updated : 23 June 2017, 08:43 PM

গাবতলী বাস টার্মিনালের ভিতরে তিনটি খাবার হোটেল থাকলেও ইফতারের কিছু পদ পাওয়া যায় কেবল একটিতে। এছাড়া রয়েছে কয়েকটি ফলের দোকান ও ভ্রাম্যমাণ কিছু ইফতারের দোকান।

বাস যাত্রীদের কেউ কেউ এসব দোকান থেকে কিনে নেন হালকা কোনো খাবার, কেউ বাসা থেকে নিয়ে আসেন পথেই ইফতার করার প্রস্তুতি। টার্মিনালে ইফতারের আয়োজন তেমন না থাকায় যাত্রীদের কিছুটা কষ্ট হলেও নাখোশ নন কেউই, বাড়ি ফেরার আনন্দটাই তাদের কাছে মুখ্য।

মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার বাসে যশোর যাচ্ছিলেন গার্মেন্টকর্মী বিলকিস আক্তার। ছোলা, পেঁয়াজু, মুড়ি আর শরবত- সবই বানিয়ে এনেছেন বাসা থেকে, বাসেই ইফতার করতে হবে বলে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার তাড়াতাড়ি ছুটি পাওয়ায় আগে আগেই শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি ঈদ করতে। গত তিন বছর ধরে এভাবেই যাই। আমার খুব ভালো লাগে রাস্তায় একটু অন্যরকমভাবে ইফতার করতে।”

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় খুলনার বাস ধরতে স্বামী, ভাসুর আর শাশুড়ির সাথে টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন সৈয়দা তাহমিনা। জানালেন আম, আপেল, জুস আর কেক কিনেছেন ইফতারের জন্য।

“আমি এই প্রথম যাচ্ছি ঢাকার বাইরে শ্বশুর বাড়িতে ঈদ করতে। ভেবেছিলাম টার্মিনাল থেকে ইফতার কিনে নেব। কিন্তু তেমন কিছুই নেই এখানে, তাই ফল আর কেকই খেয়ে নেব। সময়মতো ঝামেলা ছাড়া খুলনা পৌঁছাতে পারলেই হল।”

টার্মিনালের অপ্রতুল ইফতার বাড়ি যাওয়ার আনন্দে কোনো ছাপ ফেলতে পারেনি বলে জানান এনজিওকর্মী রায়হান আজীম। এক বোতল জুস আর তিনটি কলা কিনে ইফতারের প্রস্তুতি নেন তিনি, ৭টার বাসে যাচ্ছেন সাতক্ষীরা।

রায়হান বলেন, “ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দের কাছে সব কষ্টই তুচ্ছ। একদিন না হয় কমই খেলাম, বাড়ি ফিরতে পারলেই আমি খুশি।”

গাবতলী বাস টার্মিনালের খাবার হোটেল আল জামীতেই কেবল ইফতার পাওয়া যায়, তাও এই ভিড়ের সময় সন্ধ্যা ৬টার আগেই শেষ হয়ে যায় বলে জানান এর কর্মচারী কায়সার।

“আমাদের ৫০ টাকার একটা প্যাকেজ আছে, বিরিয়ানি আর নরমাল ইফতারিও আছে। ঈদের তিন দিন আগে থেকা শুরু হয় বেশি বেচাকেনা। এখন দম ফালানের টাইম নাই।”

বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও র্যা ব সদস্যদেরও ইফতার করতে হয় এখানেই। নিজেরাই ‘অল্প কিছু’ আয়োজন করে ইফতার সারেন বলে জানান সেখানে দায়িত্বরত মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাহমুদুর রহমান।

“আমাদের ইফতার বলতে যতটুকু একেবারে না করলেই নয়, এখানেই দাঁড়িয়ে-বসে ইফতার সেরে নেই আমরা।”

এই টার্মিনালে ৩৮ জনের মতো পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক ডিউটি করছেন বলে জানান এই পরিদর্শক। নিজেদের ইফতার সেভাবে করতে না পারলেও মানুষ শান্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছে এতেই তাদের ‘সন্তুষ্টি’ বলে জানান তিনি।

বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, পরিবহনগুলোর টিকেট কাউন্টারের কর্মচারীরাও অল্প আয়োজনে ইফতার সেরে নেন।

মুড়ি, ছোলা, চপ, পেঁয়াজু ও খেজুর দিয়ে ইফতার সাজিয়ে বসেন সুর্যমূখী পরিবহনের কাউন্টারের কর্মচারীরা।

কাউন্টার মাস্টার বাবু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার ছুটি বেশি বলে কাউন্টারে চাপ কম, নয়তো ইফতার করারও ফুরসত মেলে না।”