শুক্রবার কমলাপুর থেকে একেকটি ট্রেন ছাড়ার পর বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছে যাত্রীর চাপ আরও বেড়ে যায়। সেখান থেকে বহু যাত্রী ট্রেনের দরজা-জানালা ও হাতলে ঝুঁলে যাত্রা করেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। যারা সেখানেও জায়গা পাননি তারা উঠে পড়েন ছাদে।
ছাদে উঠে বসা কয়েকজন যাত্রী বলেন, পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে বাড়িতে ঈদ করতে হবে, তাই ভিড়ের মধ্যে যে করেই হোক গ্রামের বাড়ি যেতে চান তারা। এজন্য জীবনের ঝুঁকি জেনেও ছাদে উঠেছেন।
“কিছু করার নেই। যেতেই হবে। বাড়িতে সবার সাথে মিলেমিশে ঈদ করব বলে রওয়ানা দিছি,” বলেন রংপুর এক্সপ্রেসের ছাদে চড়া হারুন অর রশীদ।
বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেনের ছাদে উঠতে যাত্রীদের অনেককে অন্যদের সহযোগিতা করতেও দেখা গেছে।
রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক সালাহ উদ্দিন ভূইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাদে যাতে কেউ না উঠে সেই ব্যাপারে আমরা যাত্রীদের ভয়ভীতি দেখিয়েও কাজে আসেনি।”
ঈদ যাত্রার প্রথম দিন বুধবার কমলাপুর থেকে বেশ কিছু ট্রেন সময় মতো ছাড়তে না পারলেও বৃহস্পতি ও শুক্রবার মোটামুটি নির্ধারিত সূচি অনুযায়ীই বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে ট্রেনগুলো ছেড়ে যায়।
তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রংপুরের উদ্দেশ্যে রংপুর এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর বেলা ১১টায় স্টেশন ছেড়েছে।
এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রেনগুলো যেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারে সেই ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এজন্য একটি ট্রেন ছাড়া প্রায় সবগুলো ট্রেন যথাসময়ে স্টেশন ছেড়ে যায়।”
যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামতের জন্য রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়তে বেশ দেরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে সকালে চিলাহাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া নীলসাগর ট্রেনটি ২০ মিনিট দেরি করে ছেড়েছে। এই ট্রেনের ছাদসহ ভেতরে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়।
আর দুপুরে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক স্টেশন পরিদর্শনের সময় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে সুবর্ণ এক্সপ্রেস নয় মিনিট দেরি করে দুপুর ৩টা ৯ মিনিটে স্টেশন ছাড়ে।
সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “১০ থেকে ২০ মিনিট দেরি হলে আমরা বিলম্ব বলি না। একটি ট্রেন আসার পর সেটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ধোয়া-মোছা শেষে প্লাটফর্মে আসে। এরপর যাত্রীরা উঠলেই ছেড়ে দেওয়া হয়।”
এসব কারণে ‘গুটি কয়েকটি’ ট্রেন ৫ থেকে ১০ মিনিট দেরিতে ছাড়তে হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ঈসাখাঁ এক্সপ্রেসও প্রায় ৪০ মিনিট দেরিতে স্টেশন ছাড়ার কথা জানান তিনি।
ট্রেনে বাড়তি চাপের কারণে গাদাগাদি ও ছাদে করে গেলেও ছোট-বড় সবার মুখে ঈদের আনন্দ দেখা যায়।
শিশু যাত্রী তানিয়া আক্তার সকালে মা ও খালার সঙ্গে সকালে নারায়ণগঞ্জের জয়দেবপুর থেকে বাসে ঢাকায় আসে। এরপর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজশাহী এক্সপ্রেসে উঠেন তারা।
রংপুর এক্সপ্রেসে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী রায়হান শরীফ ও এনজিওকর্মী আমিনুল ইসলাম।
রায়হান বলেন, “বগুড়ায় গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের সঙ্গে ঈদ করব বলে কষ্ট করে যেতে হচ্ছে। ঠিক সময়ে বাড়ি পৌঁছে ছেলে-মেয়েদের মুখ দেখলে সব কষ্ট ভুলে যাব।”