বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সাম্প্রতিক অধিবেশনে বিষয়টি ওঠার পর ইন্টারনেট জগতে আলোচনার সৃষ্টি হলেও এটির প্রচার চাননি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক।
তিনি বলেন, “বিষয়টি প্রচার হোক এটা চাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনেও এই বিষয়টি উত্থাপন করা হবে, এটাও আমি জানতাম না।’
‘সিটিং এলাউন্স’ না নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা কমিটিতে যারা থাকেন, তারা সভায় অংশগ্রহণের জন্য বিধি অনুযায়ী টাকা পান। এটাকেই ‘সিটিং এলাউন্স’ বলে।
গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনের বাজেট উপস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন এই বিষয়টি সিনেট সদস্যদের নজরে আনেন। মঙ্গলবার তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ফেইসবুকসহ নানা মাধ্যমে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
সিনেট অধিবেশনে লিখিত বক্তব্যে কোষাধ্যক্ষ কামাল উদ্দীন বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত প্রো-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ সকলেই বিভিন্ন পর্যায়ের সভাসমূহের জন্য ‘সিটিং এলাউন্স’ অত্যন্ত আনন্দের সাথে গ্রহণ করেন। শুধু আমাদের মাননীয় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি কমানোর জন্য কোনো ‘সিটিং এলাউন্স’ গ্রহণ করেননি।
“আমার হিসেবে গত সাত বছরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে এক কোটি ২৫ লক্ষ টাকা সাশ্রয় করেছেন। উচ্চ নৈতিকতার এ এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত নয় কি?”
অধ্যাপক কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণকারীরা সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত পান। কোনো কোনো সভায় এর চেয়েও বেশি অর্থ পেয়ে থাকেন।
“আমি হিসাব করে দেখছি, গত সাড়ে সাত বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসব সিটিং এলাউন্সের কোনো টাকা গ্রহণ করেনি।”
এই দৃষ্টান্তের জন্য উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিককে ‘স্যালুট’ জানিয়ে অনেকে যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
শরিফুল হাসান নামে এক সাংবাদিক তার ফেইসবুক পাতায় লিখেছেন, “খবরটা দেখে মুগ্ধ হলাম। আমাদের আরেফিন স্যার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এই যুগের উপাচার্যরা যখন নিজের সব প্রাপ্য টাকা নিয়ে উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আপ্যায়ন ভাতা, বৈশাখ ভাতা এই ভাতা সেই ভাতা আত্মসাৎ করেন তখন আমাদের আরেফিন স্যার গত সাত বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দিলেও প্রাপ্য এক কোটি ২৫ লাখ টাকা নেননি। আবার স্যার কাউকে এই খবরটা ঘুর্ণাক্ষরে জানাতেও দেননি… স্যার, আপনাকে তাই স্যালুট।”
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন তার ফেইসবুক পাতায় লিখেছেন, “স্যারের মতো যদি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য মহোদয়গনও এই ভাতা গ্রহণ না করতেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আরও উন্নয়ন হত!!!”
ফয়সাল ইয়াছির লিখেছেন, “দেদারছে বিশ্ববিদ্যালয় এর সম্পদকে লুটে নেওয়া উপাচার্যদের ভিড়ে এ এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত......”
এএফএম মাহবুবুল হাসান মাহবুব লিখেছেন, “তিনি আমাদের সকলের প্রিয়, শ্রদ্ধেয় আরেফিন স্যার, জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব। একজন নির্মোহ, নির্লোভ, সদালাপী, পরোপকারী, দার্শনিক, সাদা মনের মানুষ।”