অতিরিক্ত যাবাহনের চাপে চট্টগ্রাম ও উত্তরের পথের মহাসড়কে মাঝে মধ্যে জট তৈরি হলেও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত টার্মিনাল থেকে সময় মতই বাস ছেড়ে গেছে বলে কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়েছে।
ঈদুল ফিতরে এবার সরকারি ছুটি রবি থেকে মঙ্গলবার। তার আগে শুক্র ও শনিবার থাকায় বৃহস্পতিবার শেষ অফিস করে অনেকেই পরিবার নিয়ে বাড়ির পথ ধরবেন।
ফলে বিকালের পর টার্মিনালমুখী মানুষের স্রোত এবং মহাসড়কে গাড়ির চাপ দুটোই বাড়বে বলে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
বৃহস্পতিবার সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এবং কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা যায় পরিস্থিতি অন্যবছরের তুলনায় স্বস্তিদায়ক।
বড় কোম্পানিগুলোর টিকেট আগেই বুকিং হয়ে যাওয়ায় টিকেটধারী যাত্রীদের টার্মিনালে এসে বাসের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কোনো কোনো বাসের টিকেট তাৎক্ষণিকভাবেও পাওয়া যাচ্ছে।
নাটোর-রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পথে চলাচলকরী তুহিন এলিট বাসের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মির্জা মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের ১৫টি করে বাস প্রতিদিন ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা আগেই টিকেট কিনে নিয়েছেন, ফলে কাউন্টারে ভিড় কম।
“এবার ঈদে যাত্রীদের চাপ এখনও কম। অন্যবছর ‘রানিং যাত্রীদের’ ভিড় থাকে। এবার এখনও তেমন দেখিনি।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাইফুর বলেন, “সরকারি ছুটি এখনও শুরু হয়নি। তাই টার্মিনালে এখনও অস্বস্তিকর ভিড় নেই। তবে ফেরি পারাপারে ঝামেলা হয় কিনা সেই ভয়ে আছি।”
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গাসহ কিছু এলাকায় গাড়ি ধীর গতিতে চললেও ‘অসহনীয় যানজট’ বৃহস্পতিবার তৈরি হয়নি।
ফলে গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গের পথে চলাচলকারী বাসগুলো মোটামুটি নির্ধারিত সময়েই গন্তেব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে পারছে বলে পাবনার পথে চলাচলকারী শাহজাদপুর এক্সপ্রেসের ব্যবস্থাপক আব্দুল করিম জানান।
সকাল পৌনে ১০টায় শাহজাদপুর এক্সপ্রেসের কাউন্টারে এসে পাবনার গাড়ির টিকেট পেয়ে যান যাত্রী জাহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “পাবনা এক্সপ্রেস, আল হামরা পরিবহন, সি লাইন এই জেলার ভালো গাড়ি। কিন্তু ওগুলোর টিকেট না পেয়ে শাহজাদপুর এক্সপ্রেসের টিকেট কিনলাম।”
কুড়িগ্রামের পথে চলাচলকারী হক ট্রাভেলসের কর্মী মাহবুব আলম বলেন, প্রতিদিন তাদের সাতটি গাড়ি ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। অন্য বছরের মতো তাৎক্ষণিক টিকেট প্রত্যাশীর সংখ্যা এবার কম।
উত্তরবঙ্গের পথে চলা হানিফ পরিবহন, আগমনী, শ্যামলী পরিবহন, এসআর পরিবহন, মানিক এক্সপ্রেসেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।
নাবিল পরিবহনের যাত্রী শহীদুল ইসলাম বলেন, তিনি ২২ তারিখ সকাল ১০টার অগ্রিম টিকেট কিনেছিলেন। কিন্তু পরে ২৪ তারিখে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শেষ মুহূর্তে ২২ তারিখের টিকেট ফেরত দিয়ে নতুন করে টিকেট সংগ্রহ করেছেন।
চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জেলার বাস ছাড়ে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে। সেখানেও সকালে যাত্রীদের খুব বেশি চাপ ছিল না বলে জানান সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম।
তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আর শুক্রবার সারাদিন ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঈদের ট্রিপ দেওয়ার জন্য গাড়ি সব সায়েদাবাদ চলে আসছে। সকাল থেকে বড়জোর ১০০ বাস ছাড়ছে। সম্ভবত আগামীকাল থেকে যাত্রী নামবে।”
সায়েদাবাদ থেকে বের হয়ে সিলেটের পথে বৃহস্পতিবার তেমন যানজট না থাকলেও চট্টগ্রাম যেতে মেঘনা ব্রিজের কাছে কিছুটা জটে পড়তে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বগুড়া ও নওগাঁর পথে চলাচলকারী শাহ ফতেহ আলীর কাউন্টার ব্যবস্থাপক তুহিন জানান, এসি/নন এসি মিলিয় প্রতিদিন তাদের ৩৯টি বাস ঢাকা ছেড়ে যায়। বৃহস্পতিবারসহ পরবর্তী দুই দিনের সব টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।
“রাতের দিকে কিছুটা যানজট থাকতে পারে। সময় মত বাস ছাড়তে পারলে যাত্রীদের ভোগান্তিও কম হবে।”
এ টার্মিনালে বগুড়ার যাত্রী রাহাত জানান, সকালে এক বন্ধুকে দিয়ে শাহ ফতেহ আলীর একটি টিকেট কিনেছেন তিনি। তবে সিট পেয়েছেন একেবারে পেছনে।
একতা ট্রান্সপোর্টের কর্মী স্বপন জানান, মহাখালী থেকে বিভিন্ন জেলার তাদের ১৭টি বাস যায় প্রতিদিন। দুপুর পর্যন্ত সূচি অনুযায়ীই বাস ছেড়ে গেছে।