জাতিসংঘের বাংলাদেশি কর্মকর্তা হামিদুর রশীদ জামিনে মুক্ত

গৃহকর্মীকে ঠকানো ও ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার সাত ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন জাতিসংঘের বাংলাদেশি কর্মকর্তা হামিদুর রশীদ।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2017, 04:17 AM
Updated : 21 June 2017, 07:07 AM

নিউ ইয়র্ক থেকে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে গ্রেপ্তারের পর বিকালে হামিদুরকে ম্যানহাটন ফেডারেল কোর্টে হাজির করা হলে বিচারক জেমস কট শর্তসাপেক্ষে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি অ্যানালাইসিস ইউনিটের প্রধান হামিদুরের (৫০) বিরুদ্ধে বিদেশি কর্মী নিয়োগের চুক্তিতে জালিয়াতি, ভিসা জালিয়াতি এবং পরিচয় জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

আড়াই লাখ ডলার বন্ডের বিপরীতে এক অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে মুক্তি পাওয়ার আগে জাতিসংঘের এই বাংলাদেশি কর্মকর্তাকে তার পাসপোর্টসহ ভ্রমণের যাবতীয় নথিপত্র সোপর্দ করতে হয়েছে ফেডারেল কোর্টে।

এছাড়া জামিনের বাকি শর্ত পূরণে আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যে তাকে সম্পদের দলিলও হস্তান্তর করতে হবে।

হামিদুরের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন রাষ্ট্রনিযুক্ত একজন আইনজীবী। পরে তিনি জানান, হামিদুর অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। তিনি আরেকজন আইনজীবী নিয়োগ করবেন।   

এর আগে গৃহকর্মীকে নির্যাতন এবং মজুরি চাওয়ায় হত্যার হুমকির অভিযোগে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলামকে গত সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়। ৩৬ ঘণ্টা পর ৫০ হাজার ডলার বন্ডে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

হামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সপ্তাহে ৪২০ ডলার মজুরিতে গৃহকর্মী নিয়োগের চুক্তি করে তার ভিসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে চুক্তিপত্র দাখিল করেন। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে গৃহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে হামিদুর নতুন একটি চুক্তিতে তার সই নেন, যেখানে সাপ্তাহিক মজুরি ২৯০ ডলার লেখা হয়।

হামিদুর রশীদ ওই গৃহকর্মীর পাসপোর্ট নিয়ে নেন এবং অন্য কোথাও কাজ করলে তাকে প্রথমে কারাগারে ও পরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে বিভিন্ন সময় হুমকি দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

হামিদুর রশীদ

মামলায় বলা হয়, হামিদুর  প্রথম দিকে ওই গৃহকর্মীর হাতে কোনো টাকা দেননি। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত কাজের জন্য বাংলাদেশে তার স্বামীকে মাসে ৬০০ ডলারের সমপরিমাণ টাকা পাঠাতেন। ওই বছর অক্টোবরে সরাসরি তার হাতে ৬০০ ডলার দেন।

ইউএনডিপির এই বাংলাদেশি কর্মকর্তা কখনোই তার গৃহকর্মী বা তার স্বামীকে মূল চুক্তি অনুযায়ী সপ্তাহে ৪২০ ডলার দেননি বলে অভিযোগে বলা হয়।

মামলায় বলা হয়, গৃহকর্মীকে যথাযথ বেতন দেওয়া হচ্ছে দেখাতে তার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হলেও তা আসলে হামিদ ও তার স্ত্রী নিয়ন্ত্রণ করতেন।

ওই গৃহকর্মী ২০১৩ সালে হামিদের বাসা থেকে চলে যান এবং আর ফেরেননি বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

আদালতে শুনানির সময় এসব অভিযোগ উত্থাপন করে রশীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানান নিউ ইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি জুন এইচ কিম।

তিনি আদালতকে বলেন, নতুন করে যে ২৯০ ডলার সাপ্তাহিক মজুরির (৫ দিনে ৪০ ঘণ্টা) চুক্তি লেখা হয়েছিল তাতেও প্রতি ঘণ্টায় মজুরি হয় মাত্র ৭ দশমিক ২৫ ডলার করে। যদিও নিউ ইয়র্কে সে সময় ন্যূনতম মজুরি ছিল ঘণ্টায় ৯ দশমিক ৬৩ ডলার করে।

হামিদুরের বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার মোট ২৯ বছরের জেল হতে পারে।

এর মধ্যে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছর, বিদেশি কর্মী নিয়োগ চুক্তিতে প্রতারণায় আরও ১৫ বছর, পরিচয়ের চুরি বিকৃতি এবং গৃহকর্মীর পাসপোর্ট আটক এবং ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার নামে প্রতারণার অভিযোগে দুই বছর এবং বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের চুক্তিতে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তার।

কংগ্রেসে পাস হওয়া আইন অনুযায়ী কূটনীতিকদের অপরাধের জন্য এসব দণ্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানান ইউএস অ্যাটর্নি কিম।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানি দুজারিক বলেন, “জাতিসংঘ হামিদুর রশীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে অবগত। জাতিসংঘ আশা করে, তাদের সব কর্মীই ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে আইনের প্রতি সম্মান দেখাবে, এমনকি গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও।”