‘`আমার ৭৩তম জন্মদিনের ভাবনা’ শিরোনামে মঙ্গলবার ওই ফেইসবুক স্ট্যাটাসে কবি লিখেছেন, “আমার ৭৩তম জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করার জন্য এবার আমি আমার জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার গ্রামে, আমার প্রতিষ্ঠিত কাশবন বিদ্যানিকেতন ও শৈলজা সংগীত ভুবনের ছাত্রছাত্রীরা বীরচরণ মঞ্চে আমার জন্মদিন পালন করবে। আমি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার জন্য উদ্যোক্তাদের সম্মতি লাভ করেছি।”
১৯৪৫ সালের ২১ জুন নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা থানার কাশবন গ্রামে জন্ম কবি নির্মুলেন্দু গুণের। ৭২তম জন্মবার্ষিকীর লগ্নে এসে জন্মদিন আর জন্মবার্ষিকীর মধ্যকার তফাৎ তুলে ধরেছেন তিনি।
শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে লেখা ‘রবীন্দ্রপত্র’ থেকে উদ্ধৃত করে নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আমার জন্মদিন প্রতিবৎসর তোমাদের কাছে নিয়ে যাচ্ছে উৎসব, আমাকে এনে দিচ্ছে ক্লান্তির ডালিতে নতুন বোঝা।’
“উৎসবের বদলে জন্মদিনে ‘ক্লান্তির ডালিতে নতুন বোঝা’ অনুভব করার বিষয়টা বিশ্বকবির জন্য যত সত্য ও প্রাসঙ্গিক, আমার মতো ছোট কবির বেলায় বিষয়টি সমান সত্য হলেও তা বড় মুখে বলবার মতো নয়। আমি সেই অধিকার রাখি না।”
প্রতিবছর জন্মদিন পালন না করে, এক-দুই বছর বিরতি দিয়ে ‘সেলিব্রেটিদের’ জন্মদিন পালন করার রীতি চালু করলেই ‘ভালো হয়’ বলে মনে করেন তিনি।
নেত্রকোণার শহরতলি মালনীতে মগরা নদীর তীরে ‘কবিতাকুঞ্জ’কে কবিতাকেন্দ্রিক গবেষণার ‘বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা বলেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।
তিনি লিখেছেন, “এখানে কবিতার ওপর মূল্যবান গবেষণাপত্র উপস্থাপনের জন্য কবিতাকুঞ্জ সেমিনারের আয়োজন করতে পারে। দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ কবি সাহিত্যিক ও গবেষকরা সেই সব সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে পারেন। বিখ্যাত মনীষীদের জন্মদিন ও আমাদের জাতীয় দিবসগুলি পালনের জন্য কাশবনের বীরচরণ মঞ্চকে ব্যবহার করা যাবে।”
নির্মলেন্দু গুণ কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন গল্প ও ভ্রমণসাহিত্য। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হলো ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’, ‘কবিতা, অমীমাংসিত রমণী’, ‘দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘তার আগে চাই সমাজতন্ত্র’, ‘দূর হ দুঃশাসন’, ‘চিরকালের বাঁশি’, ‘দুঃখ করো না, বাঁচো’, ‘আনন্দ উদ্যান’, ‘পঞ্চাশ সহস্রবর্ষ’, ‘প্রিয় নারী হারানো কবিতা’, ‘শিয়রে বাংলাদেশ’, ‘ইয়াহিয়াকাল’, ‘আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি', ‘বাৎস্যায়ন’, ‘রক্ষা করো ভৈরব’ ইত্যাদি।
‘আপন দলের মানুষ’ শিরোনামে রয়েছে তার একটি গল্পগ্রন্থ। এছাড়া লিখেছেন ‘সোনার কুঠার’ নামের একটি ছড়াগ্রন্থ। ‘আমার ছেলেবেলা’, ‘আমার কণ্ঠস্বর’ ও ‘আত্মকথা ৭১’ শিরোনামে রয়েছে তিনটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ।
সাহিত্যে অবদানের জন্য নির্মলেন্দু গুণ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন।