‘বড় বাপের পোলায় খায়’র ‘আসল’ স্বাদ চকবাজারে 

ঢাকার ইফতারের একটি পদ ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিভিন্ন স্থানে মিললেও জনপ্রিয় এই খাবারটির ‘আসল স্বাদ’ পেতে যেতে হবে পুরান ঢাকার চকবাজারে।

রিফাত রহমানসাজিয়া আফরিন ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2017, 06:46 PM
Updated : 19 June 2017, 06:46 PM

চমকপ্রদ নামের এই ইফতার পদটির চকবাজারের বিক্রেতাদের দাবি- ঢাকার অন্য জায়গাগুলোতে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ নামে যা বিক্রি হয়, তাতে ‘আসল’ রন্ধনপ্রণালী মানা তো হয়ই না, উল্টো হাঁকানো হয় চড়া দাম।

প্রতিবছর রোজার শুরুতে পুরান ঢাকার চকবাজার, নাজিমউদ্দিন রোড, চক সার্কুলার রোড, নর্থ সাউথ রোড ও শাহী মসজিদ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় ইফতারের নানা পসরা নিয়ে হাজির হন বিক্রেতারা।

“তবে ভোজন রসিকদের সমাগমে মুখর চকবাজারেই শুধু মিলবে ‘আসল’ বড় বাপের পোলায় খায় পদটি,” এমনটাই দাবি করলেন এলাকাটির বাসিন্দা ও বিক্রেতারা।

“ডিম, গরুর মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচ, গরুর কলিজা, মুরগি-কবুতর-কোয়েল ও খাসির মাংস, মুরগির গিলা কলিজা, মাংসের কিমা, চিড়া, ডাবলি, বুটের ডাল ও মিষ্টি কুমড়াসহ ১৫ পদের খাবার পদের সঙ্গে ১৬ পদের মশলা মিশিয়ে তৈরি হয় বড় বাপের পোলা,” বলেন প্রায় ১৫ বছর ধরে ইফতার বিক্রির ব্যবসায় জড়িত মোহাম্মদ খোকন। চকবাজারের চারজন ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রেতাদের একজন তিনি।

একই এলাকার আরেক বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “আমাগো এহানে কেজিতে দাম রাখি চারশ থেইক্কা সাড়ে চারশ টাকা। অন্য জায়গায় যেডি বিক্রি হয়, অইগুলান আসল না।ওরা রেসিপি জানে না, মাগার দামও রাখে বেশি।”

ঢাকার ‘অভিজাত এলাকা’ হিসেবে পরিচিত গুলশান, ধানমন্ডি ও বনানী থেকে শুরু করে উত্তরা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে ইফতারের পসরা নিয়ে বসা বিক্রেতাদেরও ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি করতে দেখেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই দুই প্রতিবেদক।

এদের সবাই আবার শুধুমাত্র তারাই ‘আসল’ ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি করছেন এমনটি দাবি করে কেজি প্রতি দাম হাঁকাচ্ছেন ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা।

প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ বছর আগে পুরান ঢাকার মোহাম্মদ কামাল মাহমুদ ওরফে কামেল মিয়া প্রথম এই খাবারটি তৈরি করেন বলে জানালেন চক বাজারের বিক্রেতারা।

বট পাতার ডালায় করে তিনি চকবাজারে বিক্রি শুরু করেন ‘বড় বাপের পোলায় খায়’।

তবে কামেল মিয়াকে অনুসরণ করলেও তার ‘আসল রেসিপি’ কোন বিক্রেতাই ধরে রাখতে পারেনি বলে জানান চকবাজারের একটি বিপণি বিতানের কর্মী আবদুর রব।

“এখন যারা চকবাজারে বড় বাপের পোলা বানায়, তারা সবাই কামেল মিয়ার রেসিপি অনুসরণ করে, তবে স্বাদ ও রন্ধনপ্রক্রিয়া সবার আলাদা আলাদা।”

আজিমপুরের বাসিন্দা সিহাব সারোয়ার পরিবারের সবার জন্য ইফতার কিনতে এসেছিলেন চকবাজারে।

তিনি বলেন, “এদের বড় বাপের পোলার স্বাদ সবচেয়ে ভাল, পুরান ঢাকার অন্য কোথাও এটি পাওয়া যাবে না। প্রতি বছর রোজায় দুই-তিন বার খাওয়া হয় এই আইটেমটি।”

রাজধানীর অন্য জায়গাগুলোর বিক্রেতারা ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ এর নামে ‘আজেবাজে জিনিস’ বেচে তাদের ব্যবসা নষ্ট করছেন বলে দাবি করেন চকবাজারে জনপ্রিয় এই খাবারটির বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন।

“আমাগো এই আইটেম বেইচা আমাগোই ব্যবসা নষ্ট করতেছে মানুষ।হেগো এই জালিয়াতি ঠেকাতে কারও কোন চিন্তা নাই।”

সূত্রাপুরের বাসিন্দা জমির মিয়া দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পুরান ঢাকায় ব্যবসা করেন।

তিনি বলেন, “অরিজিনাল বড় বাপের পোলা এইখান ছাড়া কোথাও পাইবেন না, দেইখা লন।”