পর্বত থেকে উদ্ধারের পর নতুন ঝামেলায় মুসারা

ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট কারস্টেনজে পাঁচ দিন আটকে থাকার পর উদ্ধার পেলেও হেলিকপ্টারের ভাড়া নিয়ে নতুন ঝামেলায় পড়েছেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী মুসা ইব্রাহীমসহ তিন অভিযাত্রী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2017, 12:09 PM
Updated : 19 June 2017, 12:51 PM

হেলিকপ্টার কোম্পানি এশিয়াওয়ানের দাবি অনুযায়ী ১১ হাজার ডলার দিতে না পারায় পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মুসা। 

এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে এশিয়াওয়ান কর্তৃপক্ষ বলেছে, পুরো টাকা পেলেই তারা তিন অভিযাত্রীকে ছেড়ে দেবে।  

মুসার সঙ্গে এই অভিযানে ছিলেন ভারতের এভারেস্টজয়ী দুই পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও নন্দিতা চন্দ্রশেখর। ওশেনিয়া অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কারস্টেনজ পিরামিড থেকে ফেরার পথে খারাপ আবহাওয়ার কারণে বেইজ ক্যাম্পে আটকা পড়েন তারা।

খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং নন্দিতা অসুস্থ হয়ে পড়ায় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাদের উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

দুই দফা ব্যর্থ হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া কিছুটা ভালো হলে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর ৫টা ২৩ মিনিটে এশিয়াওয়ানের হেলিকপ্টার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ২৫৭ মিটার উচ্চতায় ওই বেইজ ক্যাম্পে পৌঁছায়।

সেখান থেকে তারা নিরাপদে পাপুয়া প্রদেশের তিমিকায় পৌঁছানোর খবর দেওয়ার পর দেশে বন্ধু-স্বজনদের মধ্যে স্বস্তি আসে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পার না হতেই মুসা ও সত্যরূপ ফেইসবুকে নতুন জটিলতায় পড়ার কথা জানিয়ে বলেন, তাদের অ্যাডভেঞ্চার ‘এখনও শেষ হয়নি’।

 

মুসার ভাষ্য, তাদের উদ্ধারের জন্য তিন দফায় হেলিকপ্টার ওড়াতে হয়েছে এশিয়াওয়ানকে। সেজন্য তারা তিমিকা থেকে বেইজ ক্যাম্প পর্যন্ত তিনবার ফ্লাই করার খরচ ধরে ১১ হাজার ইউএস ডলার দাবি করছে।

“কিন্তু গতকাল রবিবার তারা নিজেরাই দেরি করে সকাল ১০টায় বেইজ ক্যাম্পের দিকে গিয়েছিল, ততোক্ষণে আবহাওয়া খারাপ হয়ে গিয়ে হেলিকপ্টার ফিরে এসেছে তিমিকায়, যা কি না পুরোটাই হেলিকপ্টার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। কারণ আমরা সকাল ৬টা থেকে প্রস্তুত ছিলাম।

“আজ সোমবার তারা সকালে আমাদের বেইজ ক্যাম্পের পাশের একটা জায়গা থেকে প্রথমবার গিয়ে ফিরে আসে। আমরা দেখতে পেয়েছিলাম হেলিকপ্টার, কিন্তু তারা প্রথমবার উদ্ধার না করেই ফিরে আসে। দ্বিতীয়বার আমরা পতাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম যেন হেলিকপ্টার দেখা মাত্র তা উড়িয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি এবং তা করেছি। এখন হেলিকপ্টার কোম্পানির কথা হল, তাদেরকে পুরো তিনবারের টাকা দিতে হবে।”

মুসা জানান, তারা তিনজন আট হাজার ডলার পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছেন এবং ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সাড়ে চার হাজার ডলার শোধও করেছেন। কিন্তু তারপরও তাদের ‘গৃহবন্দি করে রেখেছে’ এশিয়া ওয়ান।

 

সত্যরূপ তার ফেইসবুকে জানিয়েছেন, হেলিকপ্টার কোম্পানির সঙ্গে তাদের ছয় হাজার ৫০০ ডলারের চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু তিনবার যেতে হয়েছে, সেহেতু তারা আট হাজার ডলার দিতেও রাজি। আসলে এই মুহূর্তে এর বেশি তারা দিতে পারবেন না।  

মুসার বার্তায় দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে এশিয়াওয়ানের কর্মকর্তা জ্যাকব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা খারাপ আবহাওয়ার বিষয়ে আগেরই সতর্ক করেছিলেন। ওই তিনজনকে উদ্ধার করতে তাদের তিনবার যেতে হয়েছে। কিন্তু এখন তারা পুরো টাকা দিচ্ছেন না।

পুরো টাকা পেলে তবেই তাদের ছাড়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন জ্যাকব।

পর্বতারোহী রেইনল্ড মেসনারের তালিকা অনুসারে সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ পর্বত চূড়ার (সেভেন সামিট) একটি হল কারস্টেনজ পিরামিড, যা ওশেনিয়া অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া প্রভিন্সে কারস্টেনজ পর্বতমালায় ৪ হাজার ৮৮৪ মিটার উঁচু ওই শৃঙ্গ স্থানীয়ভাবে পুঞ্চাক জায়া নামেও পরিচিত।

এই অভিযানে অংশ নিতে ২৯ মে ইন্দোনেশিয়ার বালি হয়ে পাপুয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন মুসা ইব্রাহীম। বালিতে তার সঙ্গে যোগ দেন সত্যরূপ ও নন্দিতা। তাদের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ এক্সপেডিশন টু মাউন্ট কারস্টেনজ পিরামিড’।

সত্যরূপের স্যাটেলাইট কমিউনিকেটরের রেকর্ড অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় ১৩ জুন সকাল ৮টা ৪৯ মিনিটে তিন অভিযাত্রী পৌঁছান কারস্টেনজের চূড়ায়। পাঁচ দিন বেইজ ক্যাম্পে আটকে থাকার পর সোমবার সকালে তারা হেলিকপ্টারে করে পাপুয়ার তিমিকা বিমানবন্দরে পৌঁছান।