আলোচিত এ মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার দুই নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ সফিউল আজম সোমবার অভিযোগ গঠনের শুনানির এই দিন ঠিক করে দেন।
আদালতে উপস্থিত পাঁচ আসামির পক্ষে আইনজীবীরা এদিন জামিনের আবেদন করলেও বিচারক তা নাকচ করে দেন বলে এ আদালতের রাষ্ট্রেপক্ষের কৌঁসুলি আলী আকবর জানান।
অভিযোগ আমলে নেওয়ার শুনানিতে বাদীপক্ষে ছিলেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির ফাহমিদা আক্তার রিংকি।
অন্যদিকে আসামি পক্ষে শুনানি করেন মাহবুব আহমেদ, কাজী নজিবুল্লাহ হিরু ও আবদুর রহমান হাওলাদার।
মামলার আসামিরা হলেন- আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘ই-মেকার্স’ এর কর্মকর্তা নাঈম আশরাফ, ঢাকার পিকাসো রেস্তারাঁর অন্যতম মালিক রেগনাম গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ এবং সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী।
গত ৬ মে বনানী থানায় অভিযোগ দায়েরের পর ৮ জুন ঢাকার হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র দেন তিনি। সেখানে বাদীপক্ষে মোট ৪৭ জনকে সাক্ষী করা হয়।
সাফাতের জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই দুই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয় বলে এ মামলার অভিযোগ।
ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার কথা জানালেও গাড়িচালক বিল্লাল ছাড়া বাকি চার আসামিই নিজেদের দায় স্বীকার করে হাকিমের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলা হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে অভিযোগ আসে পুলিশের বিরুদ্ধেও। বাদী অভিযোগ করেন, বনানী থানা পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করেই দুই দিন পার করে দেয়। এর বাইরেও তাদের হয়রানি করা হয়।
বনানী থানার ওসি ফরমান আলী আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আসে সংবাদমাধ্যমে।
পরে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে, ধর্ষিতাদের সঙ্গে আচরণে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে থানা পুলিশের গাফিলতি ছিল।
সবশেষে ১৭ মে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নাঈম আশরাফকে, যিনি সেখানে এক আত্মীয়র বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন।
বনানীর যে চার তারকা হোটেলে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে বাদীর অভিযোগ, সেই রেইনট্রি হোটেলের মালিক ঝালকাঠির সরকারদলীয় সাংসদ বজলুল হক হারুন ও তার সন্তানরা।
সাংসদ হারুনের ছেলেদের মধ্যে এইচ এম আদনান হারুন আছেন ওই হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে। তবে দেখাশোনা করেন মূলত তার ভাই মাহির হারুন।
মাহিরের বন্ধু পরিচয় দিয়েই সাফাত ধর্ষণের ঘটনার দিন ওই হোটেলে উঠেছিলেন বলে হোটেলকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন।
অভিযোগকারী তরুণীদের একজন জানিয়েছিলেন, পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে তারা রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন।
তাদের নিতে গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী। ধর্ষণের সময় দেহরক্ষী রহমতকে দিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী।
তার দাবি, সেদিন রেইনট্রি হোটেলে নাঈম ও সাফাত ধর্ষণের পাশাপাশি তাদের নির্যাতনও করেন। পা ধরে নিস্তার চাইলেও তারা ছাড়া পাননি।
পুরনো খবর