রেলস্টেশনে ইফতার

বিশ রোজার পর থেকেই ঈদ উপলক্ষে শুরু হয়েছে বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার পালা, ট্রেন ধরতে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে অপেক্ষার মধ্যেই হাতের কাছে যা মেলে তাই দিয়ে ইফতার সারেন যাত্রীরা।

রিফাত রহমানও সাজিয়া আফরিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2017, 08:04 PM
Updated : 17 June 2017, 08:04 PM

স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতার করেন তারা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার আনন্দ-উচ্ছাসের মাঝে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে শত শত মানুষকে এই ইফতারে শামিল হতে দেখা যায়।

বাড়তি টাকা খরচ করেও এখানে ‘ভালো’ মানের ইফতার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন অনেকে। তবে বাড়ি ফেরার আনন্দের কাছে তা তেমন কোনো বিষয় নয় বলেও মন্তব্য তাদের।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টার পর আসায় এখানকার কোনো দোকানে ইফতার পাননি ব্যবসায়ী নাসিরুদ্দিন আহমেদ। তবে বাড়ি ফেরার আনন্দের কাছে একদিন ইফতার না পাওয়াটা তুচ্ছ বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেলওয়ের নিজস্ব ‘বিরতি রেস্তোরাঁ’ ছাড়াও ছোট ছোট দোকানে মিলবে ইফতার, তবে তা এত বেশি লোকের জন্য অপর্যাপ্ত।

ট্রেন ধরার উদ্দেশে ছুটতে থাকা অনেকেই আশপাশের দোকান থেকে কিছু কিনে নিয়ে আজানের সাথে সাথে প্ল্যাটফর্মেই কাগজ বিছিয়ে বসে ইফতার সারেন।কেউ কেউ আবার বাসায় তৈরি খাবার সঙ্গে নিয়ে আসেন।

বাবার সঙ্গে ‘চিত্রা এক্সপ্রেসে’ খুলনায় নানা বাড়ির যেতে স্টেশনে এসেছে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র সাজিদুর হক।

“মা সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে,” বলেন তিনি।

সন্ধ্যা ৭টায় ট্রেন ছাড়ার কথা থাকায় স্টেশনেই ইফতার সারার সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে আসেন বাবা-ছেলে।

সাজিদের বাবা আমিনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পোলাও-মাংস দিয়ে ইফতার করে নিব, রাতে আর কিছু না খেলেও চলবে।

“স্টেশনে তো ইফতার সামগ্রী সেভাবে পাওয়া যায় না, তাই বাসা থেকেই বানিয়ে দিয়েছে ওর দাদী। কষ্ট কিছুটা হচ্ছে, তবে সবাই মিলে ঈদ উদযাপন করব-এটা ভেবেই খুশি আমরা।”

কমলাপুর স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ‘বিরতি রেস্তোরাঁ’।

এর ব্যবস্থাপক মিলন চৌধুরী জানান, রেলওয়ের কর্মকর্তারাই বেশিরভাগ সময় তাদের এখানে ইফতার করেন। এর বাইরে আরও ৫০ থেকে ৬০ জনের বসার জায়গা হয় এই রেস্তোরাঁয়।  

তিনি বলেন, “ঈদ যত ঘনিয়ে আসে আমাদের কাস্টমারও তত বাড়তে থাকে। আমরা চেষ্টা করি, নাগালের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ইফতারটা দিতে।”

‘বিরতি রেস্তোরাঁর’ ঠিক নিচেই স্টেশনের ফটকের সামনে একটি টেবিলে পানি, শরবত ও প্যাকেট করা ইফতার নিয়ে বসেছিলেন মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি।তাড়াহুড়া করে স্টেশনে আসা যাত্রীরাই তার ক্রেতা।প্রতি প্যাকেট ইফতার ৮০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

চিত্রা এক্সপ্রেসেই খুলনার খালিসপুরে দাদা বাড়িতে যাবেন সিফাত চৌধুরী, সঙ্গে তার বাবা-মা ও দুই মামা।

ট্রেন আসার নির্ধারিত সময়ের আগেই ইফতারের আয়োজনে ব্যস্ত পুরো পরিবার। ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি ও কলা কিনে এনে ইফতার করতে দেখা যায় তাদের।

“স্টেশনে ভালো ইফতার পাওয়া যায় না, খুঁজে এগুলোই পেলাম,” বলেন

সিফাতের বাবা আজিজ মিয়া।

ঢাকায় এক যুগেরও বেশি সময় জুতার ফিতা ব্যবসায় জড়িত আজিজ বলেন, “বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে পারব- এতেই ভালো লাগছে। মন পড়ে আছে বাড়িতে, এজন্যই তো এতো আগেই রওনা হলাম।”

এদিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ‘মহানগর’ ট্রেন থেকে নেমেই ইফতার সামগ্রীর খোঁজে ছুটাছুটি করতে দেখা গেল অনেককে।

কিন্তু কমলাপুর স্টেশনে ইফতারের কোনো ভালো আয়োজন না পেয়ে নাখোশ শাহিন সালাউদ্দিন।

“এটা ঢাকার একটা রেলস্টেশন! কিচ্ছু (ইফতার) খুঁজে পাচ্ছি না। পানি দিয়ে ইফতার সারলাম,” বলেন তিনি।