বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তারা সাংবাদিক নেতারা বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলা তুলে নেওয়া না হলে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে।
মানববন্ধনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশা, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু সালেহ আকন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ, মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক খায়রুজ্জামান কামাল, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রর সভাপতি নাসিমুন নাহার মিনু, ক্র্যাবের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম এম বাদশা, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাশেদ নিজাম, একাত্তর টিভির সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন বক্তব্য রাখেন।
রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি বাদশা বলেন, “সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একজন বিচারক কীভাবে একটি কালো আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন? এই আইনটি সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার আইন।
“আমরা দীর্ঘদিন ৫৭ ধারা বাতিল করার দাবি করে আসছি। আইনমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীও এই আইনটি বাতিলের আশ্বাস দিয়েছেন। চলতি সংসদ অধিবেশনে আইনটি বাতিল হবে বলে আমি আশা করছি।”
ক্র্যাবের সভাপতি আবু সালেহ বলেন, গত চার মাসে তিনজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা হয়েছে। ৫৭ ধারা শুধু সাংবাদিকদের নিপীড়ন-নির্যাতন করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে এই ধারা রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, মাদক ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছে।
“এখন একজন বিচারকও এই কালো আইনে মামলা দিলেন, সাংবাদিকরা কোথায় যাবে? দুদিনের মধ্যে এই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে রাজপথ নামতে বাধ্য হবে সাংবাদিক সমাজ।”
ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, “একজন অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিচারকের বাসা বদলের ট্রাক রাস্তায় থাকায় শিশুটিকে নেওয়া যাচ্ছিল না। ওই বিচারক এই ঘটনায় অনুতপ্ত না হয়ে উল্টো ওই শিশুর স্বজনদের বিরুদ্ধে এবং সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
“এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং বিচারককে এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।”
ক্র্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন বলেন, “সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়, তবে সেটা ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক হতে হবে। কেউ কোনো একটি রিপোর্টের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি মামলা করতে পারেন, তার জন্য প্রেস কাউন্সিল আছে।
“তিনি ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারেন, মানহানির মামলাও করতে পারেন। কিন্তু ৫৭ ধারায় মামলা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করা।”
ধ্রুবর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি ৫৭ ধারা বাতিলের দাবিও জানান হারুন।
রাশেদ নিজাম বলেন, “আগামী রোববার সকাল ১০টার মধ্যে মামলাটি প্রত্যাহারের সময় বেঁধে দেওয়া হল। যদি মামলা প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে সেদিন সকাল ১১টায় আবার আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হব। বিক্ষোভ মিছিল করব, মিছিল নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে।”
তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাটি কালাকানুন বলে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন মহল। বাংলাদেশের এই আইনের সমালোচনা চলছে বিদেশেও।
৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা।
৫৭ ধারাকে কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে, হাই কোর্ট রুলও দিয়েছে আসে। সমালোচনার মুখে আইনের ধারাটি বাতিলের আশ্বাস দিয়ে আসছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।
গত ১১ জুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ‘একটি অসুস্থ শিশু, বিচারকের ট্রাক ও একটি মামলা…’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, যাতে মানিকগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বাড়ি বদলের কারণে একটি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে নেওয়ার পথ আটকে যাওয়ার কথা বলেন স্থানীয়রা।
ওই বিচারকের মানিকগঞ্জ শহরের রিজার্ভ ট্যাংকি এলাকার বাড়ি বদলানোর সময় মালামাল পরিবহনের ট্রাক ওই এলাকার এক অধ্যাপকের অসুস্থ শিশুর হাসপাতালে নেওয়ার পথ আটকে ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তখন দুই পক্ষের বাক বিতণ্ডাও হয়।
এই ঘটনা নিয়ে মানিকগঞ্জের আদালতের এক কর্মচারী ওই শিশুটির মামা এবং স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন, যে বিষয়টি প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের দুই দিন পর ১৩ জুন বিচারক মাহবুবুর রহমান মানিকগঞ্জ সদর থানায় গোলাম মুজতবা ধ্রুবর বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করেন।