পাহাড় ধস: ৪ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য রাঙামাটি ও বান্দরবানে যেসব স্থানে পাহাড় ধস ঘটেছে, সেখানে ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে অন্তত চার হাজার মানুষকে নেওয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2017, 11:24 AM
Updated : 13 June 2017, 06:13 PM

ওই তিন জেলায় সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসসহ স্বেচ্ছাসেবীরাও উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন।

রোববার রাত থেকে টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসে এই পর্যন্ত কয়েকজন সেনাসদস্যসহ অর্ধ শতাধিক নিহত হয়েছেন; নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।

এই দুর্যোগের মধ্যে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী মায়া বলেন, “সেনাসদস্যও নিখোঁজ আছেন, এখনও উদ্ধার করতে পারিনি। অনেকেই মাটিচাপায় রয়েছেন।

“সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজ করছে। জাতীয় বীর সৈনিক বন্ধুরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে দলীয় কর্মীরাও আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।”

গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও বাতাস বইছে বলে পাহাড়ি ওই সব এলাকায় উদ্ধার কাজ চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।

১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “চার থেকে সাড়ে চার হাজার মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখেছি। আরও উদ্ধার হচ্ছে, তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখছি।

“এদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রে যারা উঠেছেন তাদের খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে না যাবেন, এটা অব্যাহত থাকবে।”

আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠা মানুষদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ৫০০ মেট্রিক টন চাল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ১২ লাখ টাকাও দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

মন্ত্রী বলেন, “খাদ্যের কোনো অভাব নেই, সাহায্য করতে কোনো কৃপণতা নেই। যখন যা প্রয়োজন হবে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা তা দিতে সক্ষম আছি।”

নিহত ও আহতদের প্রত্যেক পরিবারকে যথাক্রমে ২০ হাজার টাকা ও ১০ হাজার টাকা ছাড়াও ৩০ কেজি করে চাল ও শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

পার্বত্যাঞ্চলের সংসদ সদস্যরা এলাকায় চলে গেছেন জানিয়ে মায়া বলেন, “আগামীকাল (বুধবার) সকালে সচিবসহ আমরা রাঙামাটিতে যাব, স্বচক্ষে দেখব তাদের কী অবস্থা। কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভাই-বোনদের সহযোগিতা করতে পারি আমরা তা করব।

“আপনাদের এইটুকু নিশ্চিত করতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন, সেই মোতাবেক কাজ চলছে, একটি মানুষেরও যেন ক্ষতি না হয়।”

বর্ষায় পাহাড় ধসের ঘটনা আগেও ঘটায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ায় কোনো ঘাটতি ছিল কি না- সেই প্রশ্ন করা হয় মন্ত্রীকে।

মায়া বলেন, “যারা দায়িত্বশীল, আমাদের মেয়র মহোদয়রা, কমিশনাররা তারা কিন্তু তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। ঠিক তেমনি আমাদের নির্দেশনা থাকে, যখন তিন নম্বর সিগনাল থাকে তখন প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে বলে দেওয়া হয় রাতেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। স্বেচ্ছাসেবক ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, উদ্ধারকাজে, বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসকে নক করে রাখা, সঙ্গে সঙ্গে চলে যাওয়ার জন্য।”

পাহাড়ের পাদদেশ বসবাসকারীদের আগে থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা দেখা যায়নি কেন- এ প্রশ্নে মায়া বলেন, “এটা অব্যাহত ছিল। এটা এমন একটা অবস্থা যে ইচ্ছে করলেই কিন্তু সরিয়ে নেওয়া যায় না। বললেই হয় না, রিমোট কন্ট্রোল না যে চলে গেল।

“আপনি বলতে পারেন না যে বৃষ্টি হঠাৎ করে এত ‘ডিগ্রি’ বেড়ে যাবে। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ অভ্যস্ত। বার বার তাদের সতর্ক করা হয়, মাইকিং করা হয়। অনেকে (আশ্রয় কেন্দ্রে) চলে আসেন, অনেকে আসতে চান না, জোর করে আনতে হয়।”

“দুই দিন ধরে মাইকিং করা হচ্ছে, নইলে সাড়ে চার হাজার মানুষ কীভাবে আসল?” বলেন মায়া।