সাফাত ও নাঈমসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার দুই বন্ধুসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকও আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2017, 08:32 AM
Updated : 8 June 2017, 12:37 PM

মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ঢাকার হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় বলে মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ কমিশনার আনিসুর রহমান জানান।

তিনি বলেন, মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেন অভিযোগপত্রটি ‘দেখিলাম’ বলে স্বাক্ষর করেছেন। আগামি ১৯ জুন মামলাটির তারিখ রাখা হয়েছে।

গত ৬ মে থানায় অভিযোগ দায়েরের একমাস দুই দিন পর ঢাকার হাকিম আদালতে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হল।

এ মামলার আসামিরা হলেন- আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘ই-মেকার্স’ এর কর্মকর্তা নাঈম আশরাফ, ঢাকার পিকাসো রেস্তারাঁর অন্যতম মালিক রেগনাম গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ এবং সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাফাত ও নাঈম ধর্ষণে সরাসরি অংশ নেন এবং বাকি তিনজন তাদের সহযোগিতা করেন বলে চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয়েছে।”

সাফাতআহমেদ, নাঈম আশরাফ

সাদমান সাকিফ, রহমত আলী ও বিল্লাল হোসেন

সাফাতের জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই দুই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয় বলে এ মামলার অভিযোগ।

ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার কথা জানালেও গাড়িচালক বিল্লাল ছাড়া বাকি চার আসামিই নিজেদের দায় স্বীকার করে হাকিমের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বাদীপক্ষে মোট ৪৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে বলে উপ কমিশনার আনিসুর রহমান জানান।

মামলা হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে অভিযোগ আসে পুলিশের বিরুদ্ধেও। বাদী অভিযোগ করেন, বনানী থানা পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করেই দুই দিন পার করে দেয়। এর বাইরেও তাদের হয়রানি করা হয়।

বনানী থানার ওসি ফরমান আলী আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আসে সংবাদমাধ্যমে।

পরে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে, ধর্ষিতাদের সঙ্গে আচরণে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে থানা পুলিশের গাফিলতি ছিল।

থানায় মামলা হওয়ার পাঁচদিন পর গত ১১ মে সিলেট থেকে সাফাত ও সাদমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ১৫ মে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত ঢাকায় গ্রেপ্তার হন।

সবশেষে ১৭ মে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নাঈম আশরাফকে, যিনি সেখানে এক আত্মীয়র বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। 

ধর্ষণের ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রস্থল রেইনট্রি হোটেল

বনানীর যে চার তারকা হোটেলে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে বাদীর অভিযোগ, সেই রেইনট্রি হোটেলের মালিক ঝালকাঠির সরকারদলীয় সাংসদ বজলুল হক হারুন ও তার সন্তানরা।

সাংসদ হারুনের ছেলেদের মধ্যে এইচ এম আদনান হারুন আছেন ওই হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে। তবে দেখাশোনা করেন মূলত তার ভাই মাহির হারুন।

মাহিরের বন্ধু পরিচয় দিয়েই সাফাত ধর্ষণের ঘটনার দিন ওই হোটেলে উঠেছিলেন বলে হোটেলকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন।

অভিযোগকারী তরুণীদের একজন জানিয়েছিলেন, পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে তারা রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন।

তাদের নিতে গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী। ধর্ষণের সময় দেহরক্ষী রহমতকে দিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী।

তার দাবি, সেদিন রেইনট্রি হোটেলে নাঈম ও সাফাত ধর্ষণের পাশাপাশি তাদের নির্যাতনও করেন। পা ধরে নিস্তার চাইলেও তারা ছাড়া পাননি।

সাফাত আহমেদের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের চিত্র পাওয়া যায় তার সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বক্তব্যে।

তার ভাষ্য, ইয়াবা আসক্ত সাফাত ও তার বন্ধুরা বনানীর এক রেস্তোরাঁয় নিয়মিত নেশার আসর বসাতেন। ওই হোটেলের ‘যে কোনো ওয়েটারকে জিজ্ঞাসা করলেই’ তাদের কর্মকাণ্ডের বিবরণ পাওয়া যাবে।