বাজেটে হতাশ তামাকবিরোধীরা

প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম ও উচ্চ মূল্যের সিগারেট এবং ধোঁয়াবিহীন (গুল, জর্দ্দা) তামাকপণ্যে কর না বাড়ানোয় হতাশা প্রকাশ করেছে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) ও এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2017, 01:03 PM
Updated : 1 June 2017, 01:18 PM

সংগঠন দুটির পক্ষে প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী একটি সহজ এবং কার্যকর তামাক কর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৬ সালে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, তারও বিন্দুমাত্র প্রতিফলন নেই এবারের বাজেট প্রস্তাবনায়।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেটে কম দামি সিগারেট ও বিড়ির দাম বাড়ানোর পাশাপাশি ই-সিগারেট ও এর রিফিলের উপর শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন।

যেসব সিগারেটের প্যাকেটের দাম ৪৫ টাকা বা তার বেশি সেগুলোর উপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি বাজেটে। গুল-জর্দা নিয়েও কোনো কথা বলা হয়নি।

ফাইল ছবি

এতে এসব তামাক পণ্যের প্রকৃত মূল্য কমবে দাবি করে তার ব্যাখ্যায় সংগঠন দুটি বলছে
, “
গত এক বছরে জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর সাথে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে তামাকপণ্যের মূল্য অপরিবর্তিত রাখার অর্থ ভোক্তার কাছে এগুলো আরও সহজলভ্য হয়ে যাবে
,
লাভবান হবে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি।

বাজেটে নিম্ন মূল্যস্তরের দেশীয় ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার দাম ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক হার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যদিকে কম মূল্যের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সিগারেটে বর্তমানে পৃথক মূল্য না থাকায় এ ধরনের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার দাম ৩৫ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

এতে তামাক কর কাঠামোর জটিলতা আরও বাড়ানো হয়েছে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, “তামাকবিরোধীদের সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব গ্রহণ না করে করারোপের পুরানো ও জটিল এডভ্যালোরেম পদ্ধতিই বহাল রাখা হয়েছে।

“এডভ্যালোরেম পদ্ধতি বহাল থাকায় এই দুটি পণ্যের মূল্য যতটুকু বাড়বে তার সিংহভাগই যাবে তামাক কোম্পানিগুলোর পকেটে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরের কর হার না বাড়িয়ে অর্থমন্ত্রী আবারো আন্তর্জাতিক তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা প্রদান করতে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) একমাত্র আন্তর্জাতিক তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, যারা বাংলাদেশে সকল স্তরের সিগারেট উৎপাদন করে। বর্তমানে বাজারে বিএটিবির প্রচলিত সিগারেটের ব্র্যান্ড রয়েছে ১৪টি, যার মধ্যে নিম্নস্তরের সিগারেট মাত্র ৪টি।

“সুতরাং উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে সিগারেটের কর হার না বাড়ানোর মাধ্যমে প্রকারান্তরে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিকে সুবিধা প্রদানের প্রয়াস চোখে পড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশে অর্ধেকেরও বেশি তামাক ব্যবহারকারী ধোঁয়াবিহীন তামাক (জর্দা ও গুল) সেবন করেন। অথচ প্রস্তাবতি বাজেটে এগুলোর উপর কর বাড়ানো হয়নি। আমাদের দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষত নারীদের মাঝে এই পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে জর্দা-গুল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করার কোনো উদ্যোগ বাজেটে নেই, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।”

ই-সিগারেট এবং এর রিফিল প্যাকের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও ১০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপকে স্বাগত জানিয়েছে প্রজ্ঞা ও আত্মা।