বাজেট যাই হোক না কেন দ্রব্যমূল্য যেন হাতের নাগালে থাকে, এমন প্রত্যাশা রাজধানীর মহাখালীর সায়েম কনফেকশনারী নামে একটি দোকানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইমনের।
“প্রতিবাজেটের পরই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এবার যেন দ্রব্যমূল্য না বাড়ে।”
মুহিত অবশ্য দাবি করে আসছেন, বাজেটের কারণে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বাজেট আসলে কী, তা জানেনই না জীবিকার তাগিদে বগুড়া থেকে ঢাকায় আসা রিকশাচালক মান্নান শেখ। তার কাছে জীবনের মানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়েপরে বেঁচে থাকা।
“বাজেট হইলে কী,আর না হইলেই কী? আমাগো কথা তো কেউ ভাবে না। যত দিন যাইতাছে,জিনিসপত্রের দাম খালি বাড়তাছে। কমে তো আর না। এই যে দ্যাখেন চাইলের দাম কত বাড়ছে, এমনে চলা কি আমাগের পক্ষে সম্ভব?”
“দ্রব্যমূল্যের দাম যেন সহনশীল থাকে,সেটা যেন ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যাতে না বাড়ে, সেই প্রত্যাশা করছি।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করা রাজীব দাস আছেন চাকরির সন্ধানে। নতুন বাজেটে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ার প্রত্যাশা তার।
নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী আসাদুজ্জামান জনি মনে করেন, ভ্যাটের পরিধি বাড়ায় দ্রব্যমূল্যও বাড়বে। এটি প্রভাব ফেলবে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে।
“এটি একটি বিগ বাজেট। দ্রব্যমূল্য বাড়াবে। ফলে সাধারণ মানুষের উপর চাপ বাড়বে। বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা বলছে সরকার। কিন্তু সব ধরনের মানুষের উপর যে করের চাপ, ঋণের চাপ বাড়ছে, তা আমরা টেরই পাচ্ছি।”
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহরিয়ার আমিনের মতে, বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সহনীয় মাত্রায় বাড়া উচিৎ।
“এমন যেন না হয় পানি বা গ্যাস বিল দিতে গিয়েই ব্যক্তির মাসিক আয় শেষ হয়ে যায়। আর ওষুধের দাম কোনোদিনই কমেনি, কেবল বেড়েই গেছে। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস হিসেবে ওষুধের দামটা স্থিতিশীল হওয়া দরকার। আয়কর দিতে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমুক।”
বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম অনুকূলে থাকবে এমনটাই আশা সবজি দোকানদার মোহাম্মদ শাহিনের।
“বাজেট আসলেই গরিব মানুষদের একটা জিনিসই চাই, চাল-ডাল-পেঁয়াজের দাম যেন কমে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম দিন দিন বাড়তাছে, এগুলা সাধ্যের মধ্যে থাকুক।”
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি নিত্যব্যবহার্য ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের দাম কমানো প্রয়োজন বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মতিউর রহমান।
“সাধারণ মানুষের বিনোদনের সাথে সংশ্লিষ্ট ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী যেমন; টেলিভিশন, মোবাইল এগুলোর দাম দিন দিন বেড়েই চলছে, পাশাপাশি চাল-তেল-ডাল তো আছেই।”
শিশু খাদ্য, গুঁড়া দুধ, ওষুধ ও শিক্ষা-উপকরণে মূল্য সংযোজন কর কমানোর দাবি জানান মতিউর।
“বাজেট বাড়ছে,তেমনি চাল,তেলের দামও বাড়ছে। সম্প্রতি গ্যাসের দাম বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না। ফলে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু দেখছি না বাজেটে, বরং দাম বৃদ্ধির ভয় অনেকের মধ্যে।”
তবে দেশের স্বার্থেই ‘সামান্য’ ভ্যাট বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল।
“সামান্য ভ্যাট বৃদ্ধিকে আমি নেতিবাচক হিসেবে দেখি না, কারণ আমাদের নিজের টাকাতেই পদ্মা সেতু হচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ভ্যাট বাড়লে উদ্বেগের কিছু দেখি না।”