সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানিতে আদালতকে সহায়তাকারীর (অ্যামিকাস কিউরিয়া) ভূমিকায় এসে রোববার শুনানিতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পক্ষে এই যুক্তি দেখান তিনি।
উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে নিয়ে ২০১৪ সালে সংসদ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের পর হাই কোর্ট গত বছর তা অবৈধ বলে রায় দেয়।
নয়জন আইনজীবীর করা রিট আবেদনে হাই কোর্টের ওই রায় হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর শুনানিতে আদালত ব্যারিস্টার আমীরসহ ১২ জনকে অ্যামিচি কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয়।
প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের পর রোববার অষ্টম দিনের শুনানিতে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আমীর।
প্রতিবেশী ও পাশের বিভিন্ন দেশে পার্লামেন্টের মাধ্যমে বিচারক অপসারণ পদ্ধতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে শুনানিতে তিনি বলেন, “সংসদের মাধ্যমে বিচারক অপসারণ পদ্ধতি বিশ্বের যেসব দেশে রয়েছে সেখানে নানা ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
“এটি সফল হয়নি। আমাদের আশে পাশের যেসব দেশ রয়েছে, বিশেষ করে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়াতে এটি সফল হয়নি।”
এছাড়াও তিনি বলেন, “নির্বাচনী বিরোধ নিয়ে যেসব মামলা হয়, সেগুলোর শুনানি ও নিষ্পত্তি হয় হাই কোর্টে। এসব মামলার নিষ্পত্তি করেন বিচারকরা। এখন বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি যদি সংসদের হাতে থাকে তাহলে ভারসাম্য নষ্ট করবে এবং বৈপরিত্য সৃষ্টি করবে।”
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে যে কমিটি হয়, তার সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য আমীর।
ওই সংবিধানে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল, বঙ্গবন্ধুর আমলে চতুর্থ সংশোধনে তা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়েছিল। পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন থাকার সময় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়।
নিজের তখনকার অবস্থানের সঙ্গে এখনকার বিপরীত অবস্থানের বিষয়ে আগের দিনের শুনানির পর ব্যারিস্টার আমীর বলেছিলেন, “তখন তো আমরা জুডিসিয়ারি গড়ে তুলতে পারিনি।
“তখন আপাতত সংসদের হাতে দিয়েছিলাম। কেননা তখন সংসদ ছাড়া আর কিছু গড়ে ওঠেনি।”
সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীন সত্ত্বা থাকার উপর গুরুত্ব দিয়ে রোববারের শুনানিতে ব্যারিস্টার আমীর বলেন, “আমাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করবার যে ভূমিকা, তিনটি সামরিক শাসনের কবল থেকে আমাদের বাঁচিয়েছেন সংবিধানকে রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করেছেন। সংসদ ও গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যহত রাখার জন্য স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই।”
‘আমরা ঘরে ফিরে যেতে চাই’-অ্যাটর্নি জেনারেলের এ বক্তব্যের জবাবে ব্যারিস্টার আমীর বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় দিয়ে ঘরে ফিরিয়েছেন। ঘরে ফেরাতে গিয়ে তারা এই বলল যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যাতে অক্ষুন্ন থাকে, সে জন্য এটি সংসদের হাতে না রেখে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছেই থাকুক।”
ব্যারিস্টার আমীরের পর আদালতের আহ্বানে শুনানি শুরু করেন অ্যামিকাস কিউরিয়া অ্যাডভোকেট এম আই ফারুকী।
তিনি বলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট সামরিক শাসনামলে জারি করা সব ফরমান বাতিল করলেও সুপ্রিম জুডিসিয়াল ব্যবস্থাকে রেখে দিয়েছেন। এরপর সরকারও পঞ্চদশ সংশোধনীতে এ ব্যবস্থা রেখে দেয়। তারপর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী করে।
“এই ষোড়শ সংশোধনী স্বাধীন বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোর লঙ্ঘন। বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত হতে হবে বিচারকদের দিয়েই, রাজনীতিবিদদের দিয়ে নয়।”
এই আইনজীবীর বক্তব্য অসমাপ্ত অবস্থায় শেষ হয় আদালতের কর্মঘণ্টা। সোমবারে আপিল বিভাগের কার্যতারিকায় রয়েছে আলোচিত মামলাটি।