শিল্পাচার্যের শিল্পকর্ম বিদেশি জাদুঘরে দিতে চান ক্ষুব্ধ ছেলে

বাংলাদেশে সংরক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ থেকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের শিল্পকর্মগুলো বিদেশি জাদুঘরে দিতে চাওয়ার কথা জানিয়েছেন তার ছেলে ময়নুল আবেদিন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2017, 01:55 PM
Updated : 28 May 2017, 01:57 PM

তিনি বলেছেন, “বাবার অনেক চিত্রকর্মই আমাদের কাছে আছে। কিন্তু সেগুলো এদেশে আদৌ সংরক্ষণ করা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান। সেজন্যই ভাবি, বাবার ছবিগুলো কোনো বিদেশি জাদুঘরে দিয়ে দেব।”

জয়নুল আবেদিনের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত এক স্মরণসভায় একথা বলেন ময়নুল।

এই স্মরণ সভার মূল আলোচক শিল্প সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদও শিল্পাচার্যের শিল্পকর্ম উপস্থাপনের ত্রুটির একটি ঘটনা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, গত বছর ৫ ডিসেম্বর জাতীয় জাদুঘরে চার মাস্টার পেইন্টারের ছবি নিয়ে যে প্রদর্শনী হয়েছিল, তাতে জয়নুল আবেদিনকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।

“ছবির সঙ্গে টেক্সট কীভাবে যায়, তা নিয়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কোনো ধারণাই ছিল না। পুরোটাই মহাপরিচালকের উদ্ভট পরিকল্পনাপ্রসূত।”

সভায় বক্তারা জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণের উপর জোর দেন; তার শিল্পকর্মের নকল বন্ধ করার উদ্যোগ নিতেও আহ্বান জানান তারা।

বাংলাদেশের আধুনিক শিল্প আন্দোলনের পুরোধা জয়নুল আবেদিন ছিলেন ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফ্টসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, যে প্রতিষ্ঠানটি এখন চারুকলা অনুষদে উন্নীত হয়েছে।

ঢাকার সোনারগাঁওয়ের লোকশিল্প জাদুঘর এবং ময়মনসিংহের বর্তমান জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালাটিও তার অবদান।

শিল্প চর্চায় জয়নুল আবেদিনের অবদান তুলে ধরতে গিয়ে তাকে ‘কালের সারথি’ অভিহিত করেন মঈনুদ্দীন খালেদ।

“তিনি কখনও কালকে উপেক্ষা করেননি। তার ক্যানভাসে বারবার গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, দুর্ভিক্ষ উঠে এসেছে। অনেকেই দুর্ভিক্ষের কথা জানেন, তার ছবির মধ্য দিয়ে। এর চেয়ে বড় পাওয়া একজন শিল্পীর জন্য আর হতে পারে না।”

ছবি কী করে ইতিহাসের উপাদান হতে পারে, তা বোঝাতে শিল্পাচার্যের দুর্ভিক্ষ চিত্রকর্মটির কথা বলেন চিত্র সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে আঁকা ছবি জয়নুল আবেদনিকে খ্যাতি এনে দিয়েছিল।

জয়নুলের আঁকা ‘দুর্ভিক্ষ’ ছবির উদাহরণ টেনে মঈনুদ্দীন খালেদ বলেন, “ইতিহাস শিল্পের মাঝে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি সময়কে সর্বদাই ধরে রেখেছিলেন তার কর্মে। যদি জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষ ছবিটি হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে ইতিহাস শেষ হয়ে যাবে।”

অধ্যাপক বুলবন ওসমানের সভাপতিত্বে এই স্মরণ সভায় অধ্যাপক মিজানুর রহিম ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনও বক্তব্য রাখেন।

অধ্যাপক মিজানুর রহিম বলেন, “জয়নুল আবেদিন একজন শিল্পী ও মানুষ হিসেবে খুবই কাছাকাছি। তিনি বড় মাপের শিল্পী যেমন ছিলেন, তেমনি বড় মাপের মানুষ এবং বড় মাপের বাঙালি।”

অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন,  “তিনি শিল্পকলা নিয়ে সব সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। কিন্তু সে সব বিষয়ে আমরা ঠিকমতো নজর দিতে পারিনি। ভবিষ্যত প্রজন্মকে তার কর্ম নিয়ে অধিক কাজ করতে হবে।”

অধ্যাপক বুলবন ওসমান বলেন, “জয়নুল আবেদিনের মধ্যে ছিল স্বাতন্ত্র্যবোধ, যা তার চিত্রকর্মেও সব সময় উঠে এসেছে।”

স্মরণসভার আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে জয়নুল আবেদিনের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চারুকলা অনুষদ, চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ, ছাপচিত্র বিভাগ, ভাস্কর্য বিভাগ, কারুশিল্প বিভাগ, গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ, প্রাচ্যকলা বিভাগ, মৃৎশিল্প বিভাগ ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ।

সোনারগাঁয়ের লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, চারুশিল্পী সংসদ, চারুকলা শিক্ষক পরিষদসহ চারুশিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনও ফুল দিয়ে শিল্পাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।