রাজনীতি আর ‘গণমানুষের কথা বলে না’

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণের পেছনে ‘ক্ষমতার সমীকরণ’ কাজ করেছে মন্তব্য করে সাংস্কৃতিক কর্মী নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো এখন সাধারণ মানুষের মুক্তির পক্ষে কাজ করে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2017, 04:08 PM
Updated : 27 May 2017, 04:18 PM

এই ভাস্কর্য অপসারণকে বাঙালির চেতনার অপসারণ হিসেবে দেখছেন আরেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। সতীর্থদের সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিক্ষোভ সমাবেশে এসব বলেন তারা।

ওই সমাবেশ থেকে ভাস্কর্যটি অপসারণের প্রতিবাদ এবং তা পুনঃস্থাপনের দাবিতে ৩ জুন প্রতিবাদ দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই দিন বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে জোট। একইভাবে সব জেলা ও উপজেলায়ও এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ থেকে আটকদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মিছিল

ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদ থেকে গ্রেপ্তার ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীসহ চারজনের মুক্তির দাবি জানান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি।

সমাবেশে বক্তব্যে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে।

“এই ভাস্কর্য অপসারণের নেপথ্যের কারণ আমাদের জানতে হবে। রাজনীতি এখন আর গণমানুষের মুক্তির কথা বলে না। এ কারণেই শুধু ক্ষমতার সমীকরণে যে ঘটনা ঘটা উচিত, সেটিই ঘটছে। এটি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী একটি দলের কাছ থেকে আশা করা যায় না। কিন্তু আমাদের তাই দেখতে হচ্ছে।”

কোন কোন মহল থেকে ভাস্কর্য অপসারণকে রাজনৈতিক কৌশল বলা হলেও তা ‘অপকৌশল হতে পারে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্থাপত্য অপসারণ করা হয়নি, আমাদের চেতনার অপসারণ করা হয়েছে। সরকারি দল ও বিরোধী দল সবাই যখন এই ভাস্কর্য অপসারণের পক্ষে, তবে কেন রাতের অন্ধকারে এ ভাস্কর্য অপসারণ করতে হবে? এতেই বোঝা যায়, সংস্কৃতিকর্মী তথা দেশের জনগণকে তারা ভয় পায়।

পরাজিত শক্তির সঙ্গে আপস করে নির্বাচনে ‘জেতা যায় না’ মন্তব্য করে জাতীয় চেতনা রক্ষার সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

“সংগ্রামে নামতে হবে, এটা বোঝা যাচ্ছে। আমাদের সেই প্রস্তুতি নিতে হবে।”

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সমাবেশ

মুক্তিযোদ্ধাদের এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হাসান ইমাম বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে এই আন্দোলনে আসা উচিত। যদি সংসদ না আসে তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের বলব, তারা আমাদের সঙ্গে এসে যোগ দিন।”

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, “উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে বেড়াচ্ছে এবং সেটা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হতে থাকে। হেফাজতের নির্দেশে পাঠ্যপুস্তক থেকে অসাম্প্রদায়িক লেখকদের লেখা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা তা মানি না, মানব না।”

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান, নৃত্যশিল্পী সংস্থার উপদেষ্টা আমানুল হক, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা ও সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ গিয়াস, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আখতারুজ্জামান, অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুল ইসলাম সাচ্চু, চারুশিল্পী সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গোলাম সারোয়ার।