‘পাবলিক প্লেসে’ ধূমপান: জনগণকে বাধা দিতে বললেন আইনমন্ত্রী

আইন ভেঙে কেউ ‘পাবলিক প্লেসে’ ধূমপান করলে জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2017, 09:55 AM
Updated : 27 May 2017, 02:14 PM

শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মার উদ্যোগে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০১৭’ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।  

আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে বদ্ধপরিকর। তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

“তবে আইন আর নীতিমালা করে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে হবে।

“আইন অমান্য করে পাবলিক প্লেসে কেউ ধূমপান করলে, তামাক গ্রহণ করলে আপনারা কেউ বাধা দিচ্ছেন না। আইন করেছি, কিন্তু বাধা দেওয়াটা আরও জরুরি, আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।”

কেবল আইন আর নীতিমালা করে তামাক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষেধ। কিন্তু আমি দেখেছি এই আইনটা করার পরেও মানুষ পাবলিক প্লেসে ধূমপান করছে। কেউ বাধা দিচ্ছে না। এই বাধাটা দেওয়া প্রয়োজন। আমি বিদেশে দেখেছি, যে জায়গাটা ‘নো স্মোকিং জোন’ সে জায়গায় কেউ সিগারেট ধরালে অন্য মানুষ যেভাবে তার দিকে তাকায়, সে আর সারা জীবনে সিগারেট খাবে না- এমন একটা পরিস্থিতি দাঁড়ায়।”

তিনি বলেন, “আমি অনুরোধ করব, ঠিক সেইভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। যেখানে ধূমপান করা নিষেধ, সেখানে কেউ ধূমপান করলে তাকে এমনভাবে ধীকৃত করতে হবে যেন, সে আর সেখানে চেষ্টা না করে।”     

বিড়ি সিগারেটের পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যেও কর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ধূমপান শুধু ধূমপায়ীদের ক্ষতি করে না, পরোক্ষভাবে অধূমপায়ীদেরও ক্ষতির কারণ হয়। পাশপাশি সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে, কারণ উন্নয়ন ও সুস্বাস্থ্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে।

“এই তামাক কিন্তু মানুষকে মাদকের দিকে ঠেলে দেয়। যুব সমাজ আমাদের বড় শক্তি। তামাকের নিয়ন্ত্রণ না হলে এই যুব সমাজ মাদকের দিকে ধাবিত হবে এবং আমাদের উন্নয়নকে ক্ষতি করবে, আমাদের দেশের ভিত নষ্ট করে দেবে।”  

উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কনভেনশন (এফসিটিসি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রাল) বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন আইনমন্ত্রী।

“আমি মনে করি, এফসিটিসির বাস্তবায়ন দুটি কারণে অপরিহার্য। প্রথমত এফসিটিসি ছাড়া এসডিজির তৃতীয় উদ্দেশ্য, অর্থাৎ সুস্থ জীবন যাপন এবং সব বয়সের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, এসডিজির অন্যান্য লক্ষ্য পূরণে তামাক একটি বড় বাধা। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণের উপর আমরা জোর দিয়েছি।”

আনিসুল হক বলেন, সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি পাস এখন ‘সময়ের দাবি’। নীতি দুটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলে তা পাস করতে তার ‘সর্বাত্মক সমর্থন’ থাকবে।

“প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমরা বদ্ধপরিকর।”

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে, কিন্তু মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে না। তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আগে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে; জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।”

শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন উপাচার্য।

“প্রাথমিক পর্যায় থেকে পরিবর্তন নিয়ে এলে কিছুটা হলেও তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।”

এ বিষয়ে শিশু-কিশোরদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।

সংবাদের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখায় এ অনুষ্ঠানে পাঁচ ক্যাটাগরিতে ছয়জনকে ২০১৭ সালের ‘প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার’ দেওয়া হয়।

সেরা স্থানীয় পত্রিকা ক্যাটাগরিতে দৈনিক কীর্তনখোলার চিফ রিপোর্টার গোলাম মর্তুজা জুয়েল, সেরা অনলাইন-প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরির ইংরেজি বিভাগে ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার পরিমল পালমা; বাংলা বিভাগে যৌথভাবে দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার (বর্তমানে যুগান্তরে) হামিদ-উজ-জামান মামুন ও বাংলাট্রিবিউনের বিজনেস ইনচার্জ মো. শফিকুল ইসলাম, টিভি রিপোর্টে যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার সুশান্ত সিনহা, শিশু সাংবাদিক বিভাগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘হ্যালো’র শিশু সাংবাদিক সাদিক ইভান এবার পুরস্কার পেয়েছে।

দৈনিক সমকালের উপসম্পাদক মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে এন্টি টোবাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মার আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞার কো-অরডিনেটর মো. শাহরিয়ার, আত্মার যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিরা কিরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

৩১ মে বিশ্ব ‘তামাকমুক্ত দিবস’ সামনে রেখে প্রজ্ঞা প্রতিবছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। এ বছর তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে ‘তামাক উন্নয়নের অন্তরায়’।