নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শুক্রবার বিকালে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নজরুল ইনস্টিটিউট।
‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৈনিক জীবনে শতবর্ষ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও।
আলোচনায় অতিথি হিসেবে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোনালিসা দাস বক্তব্য রাখেন।
নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, নজরুল গবেষক এরশাদ আহমেদ শাহীন এবং ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়া আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনা পর্বের অতিথি ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “নজরুলের সৈনিক জীবনের শুরু হয়েছিল ১৮ বছর বয়সে। সৈনিক জীবন থেকে তিনি ফিরে আসেন ভিন্ন এক নজরুল হয়ে।
“ওই সৈনিক জীবন তার ভেতর আন্তর্জাতিকতাবোধ তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি ছড়িয়ে দিয়েছিল বিপ্লবী চেতনা। এসব কারণেই নজরুলের সৈনিক জীবন তার জীবনের একটি বড় ঘটনা।”
নজরুলের সৈনিক জীবন তার সব প্রতিভার আঁতুড়ঘর ছিল বলছেন আলোচনা পর্বের আরেক অতিথি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোনালিসা দাস।
সেনা ছাউনির জীবন নজরুলের সাহিত্যচর্চায় মননশীলতার পেছনে প্রবলভাবে কাজ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তার গজল আঙ্গিকের গানের সূত্রপাত, ফারসি ভাষা রপ্ত করা, সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশে হাতেখড়ি, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী চেতনা গড়ে উঠেছিল ওই সময়ে। সৈনিক জীবনের গোটা সময়টা তাকে তৈরি করেছে সৃষ্টিশীলতার পথে ধাবিত হতে।”
সৈনিক জীবন নজরুলকে মানবতাবাদের প্রতিনিধি হিসেবে গড়ে তুলে বলছেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
তিনি বলেন, “এই জীবন নজরুলকে পরিণত করেছে মুক্ত পথের বৈশ্বিক মানুষে। সৃষ্টির আলোয় সমকালের ভেতর দিয়ে খুঁজেছেন মুক্ত পৃথিবী। দাঁড়িয়েছেন ঔপনিবেশিকতা, সাম্রাজ্যবাদ ও ব্যক্তিবাদের বিরুদ্ধে। এভাবেই সামষ্টিক মুক্তির সেরা সৈনিক হয়েছেন নজরুল।”
আলোচনা শেষে গান ও কবিতায় সাজানো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিশু শিল্পীদের গাওয়া ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান’ গানের মাধ্যমে এ পর্ব শুরু হয়।
এরপর গ্রিন হেরাল্ড স্কুলের শিক্ষার্থীরা নজরুলের ‘দাও ধৈয, দাও শৈর্য্য’ গানটি পরিবেশন করে ইংরেজি ভাষায়। এই গানটির স্টাফ নোটেশনসহ পরিচালনায় ছিলেন কণ্ঠশিল্পী তিমির নন্দী।
ইনস্টিটিউটের তরুণ শিল্পীদের গাওয়া দুটি গানের শিরোনাম ছিল ‘আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়’ ও ‘চল চল চল’। ইনস্টিটিউটের উচ্চতর বিভাগের শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘জয় হোক’, ও ‘শঙ্কা শূন্য’। প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের শিল্পী শ্রেয়া সুস্মিতা পরিবেশন করেন ‘মোর ঘুম ঘোরে’। নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী লায়লা আফরোজ ও ডালিয়া নওশীন।