ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদকারীদের উপর চড়াও পুলিশ

ইসলামী সংগঠনগুলোর দাবির মুখে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদকারীদের কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে হটিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2017, 07:51 AM
Updated : 26 May 2017, 10:56 AM

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভাস্কর্যটি সরানোর কাজ শুরুর পর সুপ্রিম কোর্ট ফটকের সামনে বিক্ষোভ থেকে শুক্রবার সকালে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।

শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে এগোতে চাইলে শিশু একাডেমির সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়।

মিছিলকারীরা ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে পুলিশ প্রথমে কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে; পরে জলকামান থেকে পানি এবং রবার বুলেটও ছোড়া হয়।

সেখান থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীসহ পাঁচজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পুলিশি হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।

মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ- ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্তী রিন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশু একাডেমি পার হওয়ার পরপরই জলকামান, টিয়ারশেল ও রবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে পুলিশ।”

ছাত্রফ্রন্টের সঞ্জয় কান্তি দাস, শামীমা আরা মিনা, মুক্তা ভট্টাচার্য আহত হন বলে জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তুহিন কান্তি দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীর পাশাপাশি লালবাগ থানা শাখার সভাপতি জয়, ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি মোর্শেদ হালিম, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আরিফ নুরকে পুলিশ আটক করেছে।

এ ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তুহিন।

মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস- ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ডিএমপির রমনা জোনের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সর্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্পর্শকাতর এলাকা সুপ্রিম কোর্টে মিছিল নিয়ে ঢোকা যায় না বলে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল আন্দোলনকারীদের।

“তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করি। তা ভাঙ্গার চেষ্টা করলে টিয়ারশেল দিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।”

ক’জন কে আটক করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা জানাতে পারেননি মারুফ।

মিছিল রুখতে পুলিশের ব্যারিকেড- ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এদিকে পুলিশের বাধা পেয়ে জোটের মিছিল ক্যাম্পাসে ফিরে এসে দফায় দফায় মিছিল করে। মিছিল থেকে সরকারের ‘মৌলবাদ তোষণনীতির’ বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়।

মিছিলে পুলিশের বাধার প্রতিবাদে শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

দুপুরে এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, “আগামীকাল সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। দেশের সকল জেলা, উপজেলায় এই বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় বিকালে বিক্ষোভ কর্মসূচি সমাবেশ হবে।”

ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের দাবিতে এবং মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সরকারের ‘আঁতাতের’ প্রতিবাদে আরও জোরালো কর্মসূচি ঘোষণার হুমিকও দেন তিনি।

রোমান যুগের ন্যায় বিচারের প্রতীক লেডি জাস্টিসের আদলে করা এই ভাস্কর্যটি সরানোর পক্ষে এর নান্দনিক ‘ত্রুটির’ পাশাপাশি জাতীয় ঈদগাহের কাছে অবস্থানের কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে তার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনাকারীরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস করছে সরকার এবং এতে ধর্মীয় মৌলবাদ আরও উৎসাহিত হবে।

হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন ভাস্কর্যটির বিরোধিতায় নেমেছিল। এরপর গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী নেতৃত্বাধীন এক দল ওলামার সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।