নির্বাচিত প্রতিনিধিতেই স্থানীয় সরকারের ভালো: রেহমান সোবহান

জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে স্থানীয় সরকার পরিচালনা ও শক্তিশালী করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায় বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2017, 02:34 PM
Updated : 25 May 2017, 02:34 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘কমিউনিটি ট্রাস্ট, লোকাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড এসডিজি অ্যাচিভমেন্ট’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি ও দি হাঙ্গার প্রজেক্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিক এ বৈঠকে অধ্যাপক রেহমান বলেন, “যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন তখন তাদের দলীয় কর্মী বাহিনী দিয়ে স্থানীয় সরকার চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তার ফল ভালো হয় না।”

এ সময় কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেন এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার উদ্যোগ অনেক আগের। সব সময় সব জায়গায় দেখা গেছে, এটা একটা রাজনৈতিক বিষয়।

“আমরা দেখেছি যে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জ্যোতি বসুর তার ৩৫ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকাবস্থায় রাজনৈতিক দলের কর্মীদের দিয়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার দল এখন ক্ষমতায় নেই। এখন মমতাও সে চেষ্টাই করছেন। কিন্তু উনি ক্ষমতা থেকে চলে গেলে ১০/১৫ বছর আগে আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না।”

একইভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নেও দলীয় কর্মীদের দিয়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “তাই আমাদের এখানে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে তা টেকসই হবে কিনা ভাবতে হবে।”

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “এমডিজি বাস্তবায়নকালে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করলেও সামাজিক সম্প্রীতির কারণেই আমরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হয়েছি।

“বাংলাদেশের এ সাফল্য বিশ্ব নেতৃত্বকে ২০৩০ সালকে ধরে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’-এসডিজির মতো উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণে উৎসাহিত করতে পারে।”

এমডিজিকে ভিত্তি করেই এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে গুণগত উৎকর্ষ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সুশাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলছেন দেবপ্রিয়।

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক আস্থা খুব দ্রুতই ফিরিয়ে আনা সম্ভব এবং তা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।

“একইভাবে এই গবেষণায় আরও স্পষ্ট হয়েছে, সামাজিক সম্প্রীতি আমাদের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।”

তিনি বলেন, “বিভিন্ন দেশের সেরা চর্চাগুলো অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ প্রণীত হয়, যা বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে। এই আইনের আলোকে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করে এমডিজি ইউনিয়ন গড়ার লক্ষ্যে তিন বছর আগে (২০১৪) ব্র্যাক ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট চারটি জেলার ৬১টি ইউনিয়নে যৌথভাবে কাজ শুরু করে।”

এসব ইউনিয়নে সামাজিক আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেন সিপিডির সাম্মানিক ফেলো দেবপ্রিয়।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, “যদি সুষ্ঠু কর্ম-পরিকল্পনার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে।

“কারণ এতে উন্নয়ন টেকসই হয়। যদি একটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সামর্থ্য বৃদ্ধি করা যায় এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো যায়, তাহলে তারা পদ্ধতিগতভাবে পরিষদ পরিচালনা করবেন।”

জনগণ স্থানীয় সরকার বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকলে অনেক স্থানীয় সমস্যার সমাধান সহজে করা যায় বলে মনে করেন বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি।

তিনি বলেন, “এতে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারি কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। আমরা দেখেছি, সিয়েরালিওনে যখন ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তখন স্থানীয় সরকারের উদ্যোগেই সে সমস্যার সমাধান করা হয়।”