বৃহস্পতিবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নজরুলের বিরামহীন লড়াই এবং অত্যাচার, নিপীড়ন, শোষণ বঞ্চনামুক্ত একটি আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের প্রচেষ্টাও তার রচনায় পাওয়া যায়। তাই কেবল ভাষা-সংস্কৃতি নয়, জীবনের বিপুল ক্ষেত্রে নজরুল ভাবনা আমাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে অসাম্প্রদায়িক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার পথ নির্দেশনা।
“নজরুল সাহিত্য আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতে অর্থাৎ সবসময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক। আমি আশা করি কবির দেখা শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবে।”
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। শৈশবেই স্বজন হারানো ‘দুখু মিয়া’ দারিদ্র্য আর সব বাধা ঠেলে একসময় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হয়ে ওঠেন।
বাংলা ভাষার কবিতাপ্রেমিদের কাছে নজরুল প্রেমের কবি, চির যৌবনের দূত; সেইসঙ্গে তিনি বিদ্রোহী, গৃহত্যাগী বাউণ্ডুলে।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে কবিকে স্মরণ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পর্যায়ের মূল আয়োজনে রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ বলেন, “বাংলাভাষা ও সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় প্রতিভা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার কালজয়ী সৃষ্টি, বাঙালির অন্তহীন প্রেরণার উৎস। দ্রোহ, প্রেম আর সৌন্দর্যবোধের হিরন্ময় সম্মিলন ঘটেছে তার সৃষ্টিতে। তার আবির্ভাব বাংলা সাহিত্যের দেহে ও প্রাণে সঞ্চার করেছে তারুণ্যের বিপুল ঐশ্বর্য।
“পরাধীন জাতিকে তিনি শুনিয়েছেন শেকল ভাঙার গান। বিশ্বজনীন মূল্যবোধ, সার্বজনীনতা ও অসাম্প্রদায়িকতা তার সৃষ্টিতে স্বচ্ছন্দ প্রতিভাত। তিনি মানুষের জয়গান গেয়েছেন তার কাব্য, সংগীত ও সমুদয় সৃষ্টিতে। তিনি অবচেতন জাতির চেতনার উৎস। সমাজের দরিদ্র, অবহেলিত, উৎপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের সোচ্চার কণ্ঠস্বর।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমরা যে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-শোষণহীন রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি তা নজরুলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তার সৃজনশীল প্রতিভা বাঙালি চেতনাকে সামগ্রিকভাবে ধারণ ও প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিল, আর সেজন্যই তিনি বাঙালির কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি। জাতীয় কবির জীবন ও সৃষ্টি, চিন্তা ও চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।
“এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আসুন সকল ভেদাভেদ ভুলে নজরুল চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা একটি শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তুলি।”
ওসামনী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জমান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিদ্রোহী কবির নাতনি খিলখিল কাজী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইব্রাহিম হোসেন, নজরুল ইন্সটিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তব্য দেন অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির হাতে নজরুল রচনা সমগ্র তুলে দেন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
পরে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করেন।