জেএমবি নেতা সাইদুর রহমানের সাড়ে ৭ বছরের দণ্ড

জেএমবির শীর্ষ নেতা মাওলানা সাইদুর রহমান ওরফে জাফরসহ তিন আসামিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় সাত বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2017, 09:51 AM
Updated : 25 May 2017, 01:10 PM

ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ইমরুল কায়েস বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মামলার অপর দুই আসামি আবদুল্লাহ হেল কাফী এবং তার স্ত্রী আয়শা আক্তার পলাতক রয়েছেন।

>> সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৯ ধারায় নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে প্রচার চালানোর দায়ে তিন আসামির সবাইকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে।

>> সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৮ ধারায় নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য হওয়ার অপরাধে তাদের ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের সাজার রায় এসেছে।

>> এছাড়া ১০ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হলেও রাষ্ট্রপক্ষ তা প্রমাণ করতে না পারায় ওই ধারার অভিযোগ থেকে তিন আসামিকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। 

এ আদালতের পিপি কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রায়ে বলা হয়েছে, আসামিদের দুই ধারার সাজা পরপর খাটতে হবে। অর্থাৎ তাদের মোট সাত বছর ছয় মাস জেলে কাটাতে হবে।

কিন্তু তাদের হাজতবাসকালীন সময়ও সাজা খাটা হিসেবে গণ্য হবে। ফলে ঠিক সাত বছর আগে এই দিনে গ্রেপ্তার হওয়া সাইদুরকে এ মামলায় জেলে থাকতে হবে আর ছয় মাস।

রায়ের সময় তাকে ভাবলেশহীন দেখালেও রায় ঘোষণা শেষে জেএমবির এই নেতাকে বেশ হাসিখুশি মেজাজে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

২০০৭ সালে শায়খ আবদুর রহমানসহ জেএমবির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি হওয়ার পর হবিগঞ্জের সাবেক জামায়াত নেতা মাওলানা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয় নিষিদ্ধ এ জঙ্গি সংগঠন।

ঢাকার দনিয়া নূর মসজিদের কাছে একটি বাড়ি থেকে ২০১০ সালের ২৫ মে সাইদুরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে সময় তাদের কাছে উগ্র মতবাদের বই ও সরকারবিরোধী প্রকাশনার কাগজপত্র পাওয়া যায় বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়।

পরে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার অভিযোগে ঢাকার কদমতলী থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগপত্র হওয়ার পর ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারও শুরু হয়; রাষ্ট্রপক্ষে পাঁচজনের সাক্ষ্য শোনে আদালত।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বিচারের আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ মামলায় তা না হওয়ায় বিচার মাঝপথে আটকে যায়। অনুমোদনের জন্য ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নথিপত্র পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে।

গতবছর ২৬ অগাস্ট অনুমোদন পাওয়া গেলে নতুন করে গতি পায় এ মামলার কার্যক্রম। এর ধারাবাহিকতায় গত ৪ জানুয়ারি পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র নতুন করে আমলে নিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা অভিযোগ গঠন করেন।

নতুন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় এপ্রিলে; রাষ্ট্রপক্ষে ১৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হলে গত ৮ মে সাইদুর আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। গত ১৮ মে দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বিচারক রায়ের জন্য ২৫ মে দিন রাখেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, “হাদিস-কোরআন সম্পর্কে সঠিক অভিজ্ঞতা থাকার পরও আসামিরা তার সঠিক ব্যাখ্যা না করে মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে লিফলেট প্রচার করেছে। আগেও জেএমবি কর্মীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি। এ কারণে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হল।”

এ মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, মাওলানা সাইদুরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে শিবগঞ্জ থানা, কদমতলী থানায় আরও মামলা রয়েছে। এছাড়া অপর একটি মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ড রয়েছে তার।

আর আবদুল্লাহ হেল কাফী জামালপুর থানার একটি হত্যা মামলার আসামি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।

জেএমবি নেতা মাওলানা সাইদুর রহমান, ফাইল ছবি

জামায়াত থেকে জেএমবি

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৯ সালের ১৪ অগাস্ট হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের খোঁজার-গাঁওয়ে জন্ম নেওয়া সাইদুর রহমান পড়ালেখা করেছেন মৌলভীবাজার দারুল উলুম মাদ্রাসা ও সিলেটের হযরত শাহজালাল দরগা মাদ্রাসায়।

মাদ্রাসায় পড়ার সময় ইসলামী ছাত্রশিবিরে যুক্ত হওয়া সাইদুর ১৯৭৮-৮০ মেয়াদে জামায়াতে ইসলামীর এই সহযোগী সংগঠনের মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন।

পরে তিনি জামায়াতে সক্রিয় হন এবং ১৯৮৬ সালে হবিগঞ্জ শাখার আমিরের দায়িত্ব পান। এক সময় তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্যও হয়েছিলেন বলে সাংবাদমাধ্যমের তথ্য।

নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে একটি বীমা কোম্পানিতে চাকরির পাশাপাশি ঠিকাদারী করতেন সাইদুর। জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৬ সালের অক্টোবরে সাইদুর এই জঙ্গি সংগঠনের আমির হন বলে পুলিশের ভাষ্য।

শায়খ আবদুর রহমানের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে সাইদুরের। আবদুর রহমানের ছোট ভাই জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানীর সঙ্গে সাইদুরের মেয়ে শিরিনের বিয়ে হয়েছিল। ২০০৭ সালে আবদুর রহমানের সঙ্গেই সানির ফাঁসি কার্যকর হয়।

আবার আবদুর রহমানের মেয়ের জামাই আউয়ালের ভাগ্নে মামুনুর রশীদ রিপনের বিয়ে হয়েছে সাইদুরের দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় বোনের মেয়ের সঙ্গে।

মাওলানা সাইদুরের প্রথম স্ত্রীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে শামীম ছিলেন জেএমবির আইটি শাখার প্রধান। ২০০৫ সালে স্ত্রী আলেয়াসহ ঢাকায় গ্রেপ্তার হন শামীম। তার ভাই ফাহিম ওরফে বাশার জেএমবি আর্থিক বিষয় দেখভাল করতেন বলে সংবাদ মাধ্যমের তথ্য।