তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, কাউকে খুশি করার জন্য শ্যামলের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’।
ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে গতবছর ১৩ মে কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনায় সংবাদ শিরোনামে আসেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। সেই ভিডিওতে তাকে কান ধরে উঠ-বসের নির্দেশ দিতে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে।
ওই ঘটনার দুই মাসের মাথায় তার বিরুদ্ধে এই ঘুষের মামলা করেন একই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক মোর্শেদা বেগম। তার অভিযোগ, চাকরি এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার কথা বলে ২০১৪ সালে তার কছে থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও শ্যামল কান্তি তা করিয়ে দেননি।
ওই মামলায় পুলিশ গত ১৭ এপ্রিল শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলে নারাণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্ত বুধবার তা আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
এরপর বিকালে আদালতে আত্মসমর্পণ করে শ্যামল কান্তি জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে দেন এবং এই শিক্ষককে কারাগারে পাঠানো হয়।
সকালে অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার পর শ্যামল কান্তি আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এখানে ন্যায়বিচার পেলাম না। একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে আমাকে ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”
ঘুষের অভিযোগ ‘সত্য নয়’ দাবি করে এই শিক্ষক বলেন, “যে সময় ঘুষ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে তখন শীতলকালীন বন্ধ ছিল। আমাকে হয়রানি করার জন্যই এ মামলা করা হয়েছে।”
গত বছরের ১৩ মে শ্যামল কান্তিকে যখন তারই স্কুলে শারীরিক নির্যাতন করা হয়, ওই ঘটনার ভিডিওতে তাকে কান ধরে উঠ-বসের নির্দেশ দিতে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে।
সেই ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচিত হন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের মেজ ছেলে সেলিম। সে সময় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, শিক্ষককে নয়, নাস্তিককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
পরে হাই কোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্তে দেখা যায়, ইসলাম ধর্ম বা আল্লাহকে নিয়ে শ্যামল কান্তির কটূক্তি করার বিষয়টি সত্য নয়। বরং তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায় ওই তদন্তে।
এ বিষয়ে সাংসদ সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করা হয় আদালতের নির্দেশে। আগামী চার ৪ জুলাই ওই মামলায় ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন রয়েছে।
শ্যামল কান্তি বলেন, হাই কোর্টের নির্দেশে যে মামলা হয়েছে তার বাদী তিনি নন। সেখানে তার করারও কিছু নেই। তারপরও তার ওপর ‘নানাভাবে চাপ’ দেওয়া হচ্ছে। ‘মানসিকভাবে নির্যাতন’ করা হচ্ছে।
ওই প্রসঙ্গ টেনে শ্যামল বলেন, “পুলিশের নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছে। একটা বডিগার্ড দেওয়া হলেও সে ঠিকমত দায়িত্ব পালন করে না।”
পুলিশ আগে থেকেই ‘প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির’ পক্ষে কাজ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “হাই কোর্টের ওই মামলার কারণে আমাকে চাপে রাখার জন্যই এ মামলা (ঘুষের অভিযোগ) করা হয়েছে। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে খুশি করার জন্যই পুলিশ এ ধরনের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।”
তার এই অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঘুষের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, কাউকে খুশি করার জন্য নয়। আসামির অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাতীয় পার্টির নেতা সেলিম ওসমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপনি কী করে বুঝলেন আমার কথা বলছে? আমার কথা বলছে এমন রাইট যদি থাকে আপনার, তাহলে বলেন আমি একটা মানহানির কেইস করি। নাম বলে নাই ভাই, আমি যতটুক জানছি নাম বলে নাই। নাম যদি বলে তাইলে আমি একটা মানহানির কেইস করতে পারব। আপনি যদি আমার উপকারটুকু করেন, যে নাম বলছে, তাইলে আমি একটা মানহানির কেইস করতে পারব।”
এই সংসদ সদস্যের ভাষ্য, প্রভাবশালী কে তা তিনি জানেন না। প্রভাবশালী হলে তাকে আদালতে যেতে হত না।
“যে ঘটনা, আপনি খোঁজ কইরা দেখেন, তার আগের মামলা। এতোদিন মামলাটা স্থগিত ছিল। এইটা সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। আমি কয়দিন আগে জানছি যে এরকম একটা মামলা পেন্ডিং রইছে… এই মামলাটা ছিল দেইখা…..
“আজকে তো নিরাপদেই ছিল, তাকে তো পাবলিকও কিছু বলে নাই, পুলিশও কিছু বলে নাই। সে তো পুলিশ প্রটেকশনেই ছিল। আইনকে তো সবারই শ্রদ্ধা করতে হবে, সে যেই হোক। আমি তো আইনকে শ্রদ্ধা করছি, আমিতো কোর্টে যাচ্ছি।”
ওসমান পরিবারের এই সদস্য বলেন, ওই ঘুষের মামলার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর শ্যামল কান্তি কোনোভাবেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী নন।
“হি ইজ নট মাই কম্পিটেটর। সে তো আমার কম্পিটেটর না। সে কি আমার কম্পিটেটর হতে পারে?”