ধর্মঘটের পর নতুন কর্মসূচি বিএমএ’র

ধর্মঘটের আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে নতুন কর্মসূচি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2017, 08:13 PM
Updated : 23 May 2017, 08:13 PM

এদিকে চিকিৎসকরা মঙ্গলবার প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রাখায় দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হয়েছেন রোগীরা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চিকিৎসক দেখাতে এসে ফিরে যান তারা।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যুর পর রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসকদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিতের দাবিতে বিএমএ এই ধর্মঘট ডাকে।

এদিন ‘সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে’ ধর্মঘট পালনের জন্য সারা দেশের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে বিএমএ।

বিবৃতিতে কয়েকদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে সেগুলো দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৫ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সময় কালোব্যাজ ধারণের পাশাপাশি প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন।

আগামী ২৮ মে পরবর্তী কর্মসূচি দেবে বিএমএ।

আফিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়ালে মামলা প্রত্যাহার

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী বলেছেন, সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মারা যাওয়া শিক্ষার্থী আফিয়া জাইন চৈতীর পরিবারের পাশে দাঁড়ালে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “যাদের অবহেলার কারণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের বিচারের জন্যই মামলা করা হয়েছে।

“তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি তাদের জায়গা থেকে কোনো বক্তব্য দিয়ে থাকেন এবং আফিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়ান, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাটি প্রত্যাহার করা বা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

“কিন্তু এটি পরের ব্যাপার।তাদের জায়গা থেকে অবশ্যই প্রথমে বক্তব্যটি আসতে হবে এবং আলোচনায় বসতে হবে। আমাদের জায়গা থেকে আমরা ইতোমধ্যে চেষ্টা করেছি।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই আফিয়ার নামে ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অপবাদ’ ছড়ানো হচ্ছে বলে ওই সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন আফিয়ার সহপাঠীরা।

হাসপাতাল ভাংচুরের ইস্যুটি বড় করে দেখিয়ে চিকিৎসায় ‘অবহেলার’ বিষয়টি চিকিৎসকেরা এড়িয়ে যাচ্ছেন বলেও তাদের অভিযোগ।

লিখিত বক্তব্যে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাবের খান বলেন, “আমরা প্রথমে জানলাম আফিয়ার নিউমোনিয়া, পরে জানলাম ক্যান্সার। রিপোর্টে ডেঙ্গু নেগেটিভ থাকলেও শেষে জানলাম ডেঙ্গু হয়েছিল।

“ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা আছে ডেঙ্গু ও ক্যান্সার (সুনিশ্চিত নয়)। আমাদের প্রশ্ন- আফিয়াকে দেশের সেরা চিকিৎসকেরা সেবা দিয়েছেন, অথচ রোগ নির্ণয় হলো না? আসলে কি রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা হয়েছিল? হাসপাতালে কি সে সুযোগ ছিল?”

প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালে গিয়ে যখন আমরা জানতে পারলাম আফিয়া আর নেই, তারপরে আমি বার বার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি- আমাদের শিক্ষার্থীদের সম্মেলন কক্ষে নিয়ে গিয়ে বুঝিয়ে বলুন।তারা বুঝতেই পারছে না যে আসলে রোগীর কী হয়েছে।

“তারা একবার শুনছে নিউমোনিয়া, একবার শুনছে ব্ল্যাড ক্যান্সার আবার একবার শুনছে ডেঙ্গু।কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের হুইসেল শোনা যায় এবং পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরে যেতে বলে।”

আফিয়ার চিকিৎসায় ‘অবহেলার’ প্রতিবাদে বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বুধবার সকালে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফিয়া জাইন চৈতী বৃহস্পতিবার বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর ভুল চিকিৎসার অভিযোগে গ্রিন রোডের বেসরকারি হাসপাতালটিতে ভাংচুর চালায় তার সহপাঠীরা।

চৈতীর মৃত্যুর জন্য সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে তাদের অভিযোগ, বুধবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হলেও তাকে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এরপর ওইদিন রাতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘অবহেলা’ ও ‘ভুল চিকিৎসার’ অভিযোগে হাসপাতালের পরিচালকসহ নয়জনকে আসামি করে একটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলায় হাসপাতালের পরিচালক এম এ কাশেমকে গ্রেপ্তারের পর ইতোমধ্যে জামিন নিয়েছেন তিনি।

ভাংচুর ও মামলার নিন্দা জানিয়ে বিএমএ বলছে, চৈতী এক ধরনের ব্ল্যাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তিনি রোগটির এমন পর্যায়ে ভর্তি হয়েছিলেন যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা শুরুও করতে পারেনি।