সাহিত্যিক শওকত ওসমানের জীবন-দর্শন নিয়ে আলোচনা

আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে সাহিত্যিক শওকত ওসমানের জীবন ও দর্শন নিয়ে সেমিনার হয়েছে।

নিজ্স্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2017, 05:33 PM
Updated : 22 May 2017, 05:33 PM

সোমবারের এ আয়োজনে আসা বক্তারা সমকালের সমাজ ব্যবস্থায় শওকত ওসমানকে এখনও প্রাসঙ্গিক বলছেন।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক সভাপতি এম আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ‘শওকত ওসমান: জীবন ও দর্শন’ শীর্ষক এ সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী  ইয়াফেস ওসমান।

এতে প্রধান বক্তা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ একাডেমির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল আজাদ।

শওকত ওসমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক আজাদ বলেন, “শওকত ওসমান চেতনা ও প্রতিবাদী চেতনার প্রধান লেখক। নজরুল পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক কাব্যধারার একমাত্র উত্তরাধিকার তিনি।”

শওকত ওসমানের সাহিত্যে প্রতিবাদী চেতনার দিকটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শুধু কাগজে কলমে নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে কখনো পিছপা হননি তিনি।  নিরন্নের পাশে থেকেছিলেন তিনি। তাই বলব, সমকালের অসম সমাজ ব্যবস্থায় তিনি এখনো প্রাসঙ্গিক। আদ্যোপান্ত বিদ্রোহী চেতনার বিরলপ্রজ মানুষ ছিলেন তিনি।”

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরে স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করে যাওয়া শওকত ওসমান বাংলার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বিকল্প ‘খুঁজে পাননি’ বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আবুল আজাদ।

শওকত ওসমানের ধর্মচিন্তার দিকটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “স্যার আমাকে সবসময় বলতেন, ধর্মভিত্তিক সমাজ থেকেই কাজের স্বীকৃতি আদায় করে নিতে হবে। তিনি বলতেন, কখনো স্বধর্মচ্যুত হননি তিনি।”

সভাপতির বক্তব্যে এম আজিজুর রহমান বলেন, “পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছেন… স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি, তাদের মধ্যে শওকত ওসমান অন্যতম। কবি ও সাহিত্যিকদের কখনো মৃত্যু হয় না। শওকত ওসমানেরও মৃত্যু হয়নি। তিনি বেঁচে আছেন তার সৃষ্টিকর্মে।”

শওকত ওসমানের বড় ছেলে বুলবুল ওসমান বলেন, “বাবার মধ্যে রাজা রামমোহন রায়ের সমাজচেতনার প্রভাব পড়েছিল।  পশ্চিমবঙ্গে কাটানো বাল্যকালে তার মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বীজ রোপিত হয়েছিল।”

শওকত ওসমানকে নিয়ে আলোচনা করতে এসে অধ্যাপক আফসার উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পাঠ্যসূচিতে শওকত ওসমানকে সেভাবে পড়ানো হয় না। অথচ শওকত ওসমানের লেখায় প্রতীক, রূপকে কখনো অস্পষ্টতায় ঘেরাটোপ ছিল না। তিনি জীবনকে সরলভাবে দেখার গভীর প্রত্যয় ব্যক্ত করে গেছেন।

পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী শওকত ওসমানের তৃতীয় ছেলে ইয়াফেস ওসমান বলেন, “বাবা বেঁচে থাকতে আমি কখনো ছড়া কবিতা লিখতে সাহস করতাম না। বাবার মৃত্যুর পরে আমি বাবার স্যাটায়ার আঙ্গিক অনুসরণ করছি।”

নিজেদের পরিবারের আর্থিক দৈন্যদশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তখন পয়সা কামানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু এই ভদ্রলোক যোগ গ্রহণ করে নষ্ট হননি। এমনই ছিল তার জীবনবোধ।”