ঢাবি সিনেটে নীল শিক্ষকদের নিরঙ্কুশ জয়

বিভক্তির কারণে প্রার্থী বাছাইয়ে নাটকীয়তার জন্ম দিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে বিপুল বিজয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের নীল দল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2017, 09:44 AM
Updated : 22 May 2017, 01:21 PM

সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধির মধ্যে ৩৩টিতে জয়ী হয়েছে নীল দলের প্রার্থীরা। আর বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র দুজন সিনেটে বসার ছাড়পত্র পেয়েছেন।  

সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ভোটগ্রহণের পর নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন ফল ঘোষণা করেন।  

তিনি বলেন, “সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে। আমি বিজয়ীদের অভিনন্দন জানাই।”

এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৬১৬ জন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪৪৪ জন, অর্থাৎ ৮৯ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। দুই প্যানালের ৬৯ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে সিনেটে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিয়েছেন তারা।

সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। ওই নির্বাচনে নীল দল ২৭টি এবং সাদা দল ৮টি সদস্য পদে জয় পেয়েছিল। এবার সেই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিয়েছে সরকার সমর্থকরা।

নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাজমা শাহীন ভোটে জয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তাদের এই নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইতিবাচক বার্তা দেবে বলে তিনি মনে করছেন।

“মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকবে এটা আবারও প্রমাণিত। দলের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি ছিল, কিন্তু নীল দলের শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হল, আমরা একটা চেতনায় বিশ্বাস করি, সেটা হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।”

অন্যদিকে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন খান নিজেও এবার জয় পাননি।

ভোটের ফল প্রকাশের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের সম্মানিত ভোটাররা যেটা ভালো মনে করেছেন, সেভাবে রায় দিয়েছেন। সেই রায়ের ওপর আমরা শ্রদ্ধাশীল।

“গত কয়েক বছরে অনেক নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন নীল দলের শিক্ষকরা, সেটার প্রতিফলন এই ভোটে লক্ষ্যণীয়।”

নীল প্যানেল থেকে সিনেটে যাচ্ছেন যারা

নীল দলের আহ্বায়ক পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহীন

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ

টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূইয়া

ইতিহাস বিভাগের আবু মো. দেলোয়ার হোসেন

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মাদ

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইসতিয়াক মঈন সৈয়দ

ক্লিনিক্যাল ফার্মাসি অ্যাণ্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এস এম আব্দুর রহমান

ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক কাজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি

আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসাইন

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বায়তুল্লাহ কাদেরী

মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মুবিনা খন্দকার

লেদার ইঞ্জিনিয়ানিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আফতাব আলী শেখ

জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক মো আফতাব উদ্দিন

থিওরিটিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটেশনাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ

ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুস ছামাদ

ক্রিমিনোলজি বিভাগের মো. জিয়াউর রহমান

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. ফজলুর রহমান

অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান

 ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মাদ আলী আক্কাস

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম

অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুপ্রিয়া সাহা

তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক সুব্রত কুমার আদিত্য

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ

ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম রেজাউল করিম

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী হানিয়াম মারিয়া

গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চন্দ্র নাথ পোদ্দার

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস

ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পাপিয়া হক

রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লাফিফা জামাল

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুসরাত জাহান

সাদা প্যানেল থেকে জয়ী যারা

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম

পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন

এবারের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে গিয়ে বিভক্তির মুখে পড়ে নীল দল। এ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাজমা শাহীন গত ১১ মে একটি প্যানেল জমা দেন। তার পরপরই আরেকটি প্যানেল জমা পড়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে।

তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গত মঙ্গলবার (১৬ মে) মাকসুদ কামালের নেতৃত্বাধীন প্যানেলটি বাতিল ঘোষণা করেন নির্বাচনের কমিশনার কামাল উদ্দীন।

ওই দিনই গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নীল দলের শিক্ষকদের এক বৈঠকের পর আহ্বায়ক নাজমা শাহীনের প্যানেলকে সমর্থন জানান মাকসুদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থি শিক্ষকদের গোলাপি দল এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সাদা দল এবার ৩৫ পদের সবকটিতে প্রার্থী দিলেও নীল দলের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান সরে দাঁড়ানোয় এই প্যানেলে প্রার্থী ছিলেন ৩৪ জন। তাদের মধ্যে কেবল মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়মা খানমই জিততে পারেননি।

নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, “তরুণ সহকর্মী প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৫ ভোটের কারণে বিজয়ী হতে পারেননি। আমরা আশা করেছিলাম ৩৪টিতে জিতব।”

বিজয়ী ৩৫ শিক্ষকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯২৭ ভোট পেয়েছেন নীল দলের অধ্যাপক মো. আফতাব আলী শেখ।

একই প্যানেলের অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ বিজয়ীদের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন। ৬৫৮ ভোট পেয়ে তার অবস্থান ৩৫ তম।

সাদা দলের বিজয়ী দুজনের মধ্যে অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ৮২২ ভোট পেয়ে আছেন ৬ নম্বরে। আর জয়ের দেখা না পাওয়া সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আখতার হোসেন পেয়েছেন ৫৮১ ভোট। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ১০৫ সদস্যবিশিষ্ট সিনেট কমিটিতে ৩৫ জন সদস্য শিক্ষকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হন। আর ২৫ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কথা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে থেকে।

নিয়ম অনুযায়ী সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা যাদেরকে মনোনীত করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নেই।

আচার্য, উপাচার্য, জাতীয় সংসদ ও সরকার সিনেটের বাকি সদস্যদের মনোনীত করেন। প্রতি তিন বছর পর সিনেট নির্বাচন হয়।