প্রশ্ন ফাঁস: অগ্রণী ব্যাংকের বিকালের পরীক্ষা স্থগিত

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষার বিকালের অংশের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2017, 08:58 AM
Updated : 19 May 2017, 09:33 AM

এ পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান আবু তালেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনিবার্য কারণবশত বিকালের পরীক্ষা স্থগিত করেছি আমরা।”

পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় শুক্রবার দুই ভাগে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা গ্রহণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগকে।

সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রথম ভাগের পরীক্ষা শুরুর আগেই একটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে খবর আসে। ফেইসবুকেও অনেকে ‘ফাঁস হওয়া প্রশ্নের’ ছবি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।  

এই পরিস্থিতিতে সকালের অংশের পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর আয়োজক কর্তৃপক্ষ বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টায় নির্ধারিত দ্বিতীয় অংশের পরীক্ষা স্থগিত করে।  

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আবু তালেব, “বিকালের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ কারণে আমরা রিস্ক নিতে চাচ্ছি না। অভিযোগটি আমরা যাচাই বাছাই করব। পরে সুবিধাজনক সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।”

সকালে নেওয়া পরীক্ষার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওটার ফাঁস হওয়ার অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তারপরও বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।” 

দুই ভাগ মিলিয়ে মোট দুই লাখ ৩ হাজার চাকরিপ্রত্যাশীর এই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল বলে অধ্যাপক তালেব জানান।

পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে দুই ভাগে সকাল-বিকাল নেওয়ার কথা জানিয়ে অধ্যাপক আবু তালেব জানান, দুই সেশন মিলিয়ে দুই লাখ ৩ হাজার পরীক্ষার্থী ছিল।

এর মধ্যে সকালে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় এক লাখ চারকরিপ্রত্যাশী। আর বিকালে বাকিদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকেই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ও তার উত্তর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন। 

রবি ইসলাম নামের এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, “রাত থেকেই শুনছিলাম প্রশ্ন নাকি ফাঁস হয়েছে। সকালে হলে ঢোকার আগে দেখি প্রশ্ন দেখে দেখে উত্তর মুখস্ত করছে। পরে পরীক্ষার হলে প্রশ্ন পাওয়ার পর দেখি হুবহু মিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র রাকিবুল ইসলামও অভিযোগ করেন, অপরিচিত এক পরীক্ষার্থীর কাছে তিনি হাতে লেখা প্রশ্ন ও উত্তর দেখেছেন। ইংরেজি বিষয়ের অনেকগুলো প্রশ্ন পরীক্ষার মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলে গেছে।

“এটা দেখে রাগ হচ্ছিল খুব। খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দায়িত্বরত পরীক্ষক বললেন, এক ঘণ্টার আগে নাকি বের হওয়ার নিয়ম নেই।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করা একজন জানান, সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পর তিনি অনেকের হাতেই প্রশ্ন দেখেছেন। পরে হলে পাওয়া প্রশ্নের সঙ্গে তা মিলেও গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে পাস করা আরেকজন বলেন, “অনেকের কাছে অনেক মাধ্যমে প্রশ্ন আসছে। কারও কাছে হুবহু প্রশ্ন, কারও কাছে সব প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর।”

অগ্রণী ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা এ এম আবিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিয়োগের এই পরীক্ষার সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক কোনোভাবেই যুক্ত নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে।

ওই কমিটি এবার দরপত্রের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্ব দিয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর বিকালের অংশের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সকালের পরীক্ষার বিষয়ে কী করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত তারা এখনও জানায়নি।”