‘অগ্রগতিতে নিঃসঙ্গ নারী, সহযোগী নয় পুরুষ’

পুরুষের অগ্রগতির পেছনে নারীরা সহযোগী হলেও নারীর অগ্রযাত্রায় পুরুষরা তেমন সহযোগী হচ্ছে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সাহিত্যিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2017, 02:28 PM
Updated : 18 May 2017, 02:28 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সাহিত্যে জেন্ডারের সীমার পুননির্মান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথা সাহিত্যিক নিয়াজ জামান নারীর অগ্রযাত্রার পথে বাঁধা হিসেবে সংসারের অতিরিক্ত কাজের চাপের বিষয়টি তুলে ধরেন।

সাংসারিক চাপ এড়িয়ে পুরুষরা এগিয়ে যেতে পারছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটি ভাবা হয় যে, একজন সফল পুরুষের পেছনে রয়েছে একজন নারী। ঠিক সেভাবেই সফল নারীর পেছনেও একজন পুরুষের অবদান থাকা উচিত, কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়।

“অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অজস্র নির্ঘুম রাত এবং বিশ্রামের সময়টাতে কাজ করে নারীকে সফলতা অর্জন করতে হয়। কিন্তু পুরুষ বিষয়টা সহজেই করতে পারে, কারণ তার পেছনে একজন নারী রয়েছে।”

বেসরকারি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজী বিভাগের এ উপদেষ্টা বলেন, “এমনকি এখন স্বামীদের বোঝাপড়ার বিষয়টি অনেক বাড়লেও অধিকাংশ পুরুষ এখনও মনে করেন যে, বাড়ির কাজটি নারীর কাজ।

“এমনকি যদি নারীরা বাইরে কাজ করেন, সেক্ষেত্রেও ঘরের সব কাজের দায়িত্ব তার উপরই বর্তায়। তার পুরুষ সহকর্মীর মতো সে ক্লাবে সময় ব্যয় করেন না, বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে গল্পগুজব করেন না।”

তরুণ নারীদের পেশাদারি জীবনে মাতৃত্বের চাপের বিষয়টি তুলে ধরে নিয়াজ জামান বলেন, “বুদ্ধিভিত্তিক জীবনের সাথে মাতৃত্বের মেলবন্ধন খুবই কঠিন।”

ঘরে-বাইরে নারীদের সহিংসতার শিকার হওয়ার উদাহরণ তুলে ধরে এ কথা সাহিত্যিক বলেন, “ঘর থেকে যেসব নারীরা বাইরে পা রাখছে, তারা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তবে এটাও মনে রাখা উচিত, তার চেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে তাদের বাড়িতে। বাবা, স্বামী, সৎ বাবা, ছেলে, ভাই, দেবর, ভাসুরদের দ্বারা।

“পৃথিবী এখনও নারীদের জন্য নিরাপদ নয়। নারীরা যতই নিজেদের নারীবাদী বা মানবতাবাদী বলুক, তাদের সচেতন হতে হবে। ক্ষমতা কাঠামোয় তাদের পরিবর্তন আনতে হবে।”

অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ ও হিউম্যানিটিস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফিরদাউস আজিম বলেন, “আশির দশকে যারা নবীন ছিলেন তাদের জন্য সময়টা খুব আলোড়নের, সাহিত্যের ক্ষেত্রটাও তখন নতুনভাবে দেখা হচ্ছিল। জেন্ডার ,নারী ,সমাজ এগুলোকেও সাহিত্যের গণ্ডি থেকেই দেখার প্রয়াস করা হচ্ছিল।

“তখনকার মত এখনও জেন্ডার বলতে মূলত নারীর কথাই ভাবা হয়। কিন্তু নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এই পুরানো সরলীকরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জেন্ডার এখন কেবল নারী নয়, জেন্ডার একটি সামাজিক পরিচয়; যাকে নিরন্তর প্রশ্ন করা উচিত।”

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ ও হিউম্যানিটিস বিভাগ আয়োজিত দুইদিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর রুথ ইভানস।

এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতের হায়দ্রাবাদের ইংলিশ অ্যান্ড ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সুজী থারু, ইউনিভার্সিটি অফ হায়দ্রাবাদ এর সৌম্য দেচাম্মা ও দীপা শ্রীনিবাস।