আদালতে সাফাত ও সাদমানের ‘স্বীকারোক্তি’

বনানীর ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2017, 12:37 PM
Updated : 18 May 2017, 12:59 PM

ছয় দিনের রিমান্ডের একদিন বাকি থাকতে সাফাতকে এবং পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে সাদমানকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।

দুজন হাকিমের খাস কামরায় জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয় বলে মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজ এই দুইজনকে আদালতে নেওয়া হলে তারা দুই জন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।”

আদালত পুলিশের এস আই আবদুল মান্নান জানান, আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত জবানবন্দি দেন মহানগর হাকিম আহসান হাবিবের কাছে।

আর রেগনাম গ্রুপ ও পিকাসো রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান জবানবন্দি দেন মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর খাস কামরায়।

সাফাত ও তার বন্ধু সাদমানকে গত ১১ মে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক সাফাতকে ছয়দিন এবং সাদমানকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান।

এরপর ১৫ মে এ মামলার অপর দুই আসামি সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলীকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন আদালত বিল্লালকে চারদিন এবং রহমতকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠায়।

ঢাকার আদালতে সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ, ফাইল ছবি

মামলার পঞ্চম আসামি নাঈম আশরাফকে বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকেও সাত দিনের রিমান্ডে পাঠায়।

গত ৬ মে বনানী থানায় দায়ের করা এ মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন সাফাত ও নাঈম। বাকি তিনজন তাদের সহযোগিতা করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডে চার আসামি অভিযোগ ‘অনেকটাই স্বীকার করেছে’ এবং তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য তারা যাচাই বাছাই করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, নারী নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা দেওয়া সে অনুযায়ী অভিযোগের সমর্থনে প্রাথমিক কিছু তথ্য তারা জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছেন।

অভিযোগকারী তরুণীদের দাবি, সেদিন রেইনট্রি হোটেলে নাঈম ও সাফাত ধর্ষণের পাশাপাশি তাদের নির্যাতনও করেন। পা ধরে নিস্তার চাইলেও তারা ছাড়া পাননি।

সাফাত আহমেদের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের চিত্র পাওয়া যায় তার সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বক্তব্যে।

তার ভাষ্য, ইয়াবা আসক্ত সাফাত ও তার বন্ধুরা বনানীর এক রেস্তোরাঁয় নিয়মিত নেশার আসর বসাতেন। ওই হোটেলের ‘যে কোনো ওয়েটারকে জিজ্ঞাসা করলেই’ তাদের কর্মকাণ্ডের বিবরণ পাওয়া যাবে।

ধর্ষণের ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রস্থল রেইনট্রি হোটেল

বনানীর যে চার তারকা হোটেলে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে বাদীর অভিযোগ, সেই রেইনট্রি হোটেলের মালিক ঝালকাঠির সরকারদলীয় সাংসদ বজলুল হক হারুন ও তার সন্তানরা।

সাংসদ হারুনের ছেলেদের মধ্যে এইচ এম আদনান হারুন আছেন ওই হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে। তবে দেখাশোনা করেন মূলত তার ভাই মাহির হারুন।

মাহিরের বন্ধু পরিচয় দিয়েই সাফাত ধর্ষণের ঘটনার দিন ওই হোটেলে উঠেছিলেন বলে হোটেলকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন।

অভিযোগকারী তরুণীদের একজন জানিয়েছিলেন, পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে তারা রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন।

তাদের নিতে গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী। ধর্ষণের সময় দেহরক্ষী রহমতকে দিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী।