বনানীর ধর্ষণ: নাঈম আশরাফ রিমান্ডে

বনানীর ধর্ষণ মামলার আসামি নাঈম আশরাফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2017, 10:07 AM
Updated : 21 May 2017, 07:06 AM

তদন্ত কর্মকর্তার করা রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামান বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।

এদিকে এ মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফ এদিন দুইজন হাকিমের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে আদালত পুলিশের এসআই আবদুল মান্নান জানিয়েছেন।

বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ নাঈম আশরাফকে ঢাকায় নিয়ে আসে, যার আসর নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম।

দুপুরে তাকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি।

এই রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে নাঈমের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন।

শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে নাঈমকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

ঢাকার আদালতে সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ, ফাইল ছবি

এই ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফকে গত ১১ মে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার চার দিনের মাথায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অপর দুই আসামি সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী এবং গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে।

এরপর বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে পুলিশ নাঈম আশরাফকে গ্রেপ্তার করে। চান্দেরবাজার এলাকায় দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে তিনি লুকিয়ে ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। 

গত ৬ মে বনানী থানায় দায়ের করা এ মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন সাফাত ও নাঈম। বাকি তিনজন তাদের সহযোগিতা করেন।

নাঈম গ্রেপ্তার হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডে চার আসামি অভিযোগ ‘অনেকটাই স্বীকার করেছে’ এবং তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য তারা যাচাই বাছাই করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, নারী নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা দেওয়া সে অনুযায়ী অভিযোগের সমর্থনে প্রাথমিক কিছু তথ্য তারা জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছেন।

তবে চার আসামির রিমান্ড এখনও শেষ না হওয়ায় এবং পঞ্চম আসামি মাত্র ধরা পড়ায় ঘটনার খুঁটিনাটি নিয়ে এখনই সংবাদমাধ্যমের সামনে বিস্তারিত বলা সীমীচীন হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।  

“এখন পর্যন্ত যেহেতু মেইন একিউজড, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ কেবল শুরু হয়েছে। সেখানে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের কথা আমরা জানতে পেরেছি। কী পরিস্থিতিতে কী হয়েছিল জিজ্ঞাসবাদ শেষেই আমরা তা নিশ্চিত করতে পারব।”

নাঈমও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের বিষয়টি ‘স্বীকার করেছেন’ দাবি করে মনিরুল বলেন, রিমান্ডে তার কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে তারা আশা করছেন।

নাঈম আশরাফ, যিনি নাম ভাঁড়িয়ে ছিলেন বলে প্রকাশ পেয়েছে

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের হালিম নাম ভাঁড়িয়ে ঢাকায় নাঈম আশরাফ নামে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন বলে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর প্রকাশ পায়।

গত ৬ মে মামলার পর গণমাধ্যমে নাঈমের ছবি দেখে তাকে হালিম বলে শনাক্ত করেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের গাইন্দাইল গ্রামের বাসিন্দারা।

হালিম ওই গ্রামের ফেরিওয়ালা আমজাদ হোসেনের ছেলে। এলাকায় প্রতারক হিসেবে তার পরিচয় ছিল।

গ্রামবাসী জানায়, হালিম প্রভাবশালী বিভিন্ন জনকে তার বাবা পরিচয় দিয়ে নানা সুবিধা আদায় এমনকি বিয়েও করেছিল দুই বার।

ঢাকায় এসে নাঈম আশরাফ নাম নিয়ে ‘ই-মেকার্স’ নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলে ২০১৪ সালে ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টের আয়োজন করেন তিনি।

২০১৬ সালে ঢাকায় ভারতের আরেক শিল্পী নেহা কাক্কারকে নিয়ে ‘নেহা কাক্কার লাইভ ইন কনসার্ট’ অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেন নাঈম বা হালিম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈম বিভিন্ন জনের সঙ্গে নিজের সেলফি দিতেন, যা সুবিধা নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হত বলে এখন মনে করছেন ওই ছবিতে থাকা ব্যক্তিরা।

নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে হালিম এলাকায় পোস্টার-ব্যানারও লাগাতেন; যদিও সংগঠনে তার কোনো পদ ছিল না বলে জানান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাজীপুরের নেতারা।

আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাতের সঙ্গে নাঈমের নিবিড় ঘনিষ্ঠতার কথা সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারাহ মাহবুব পিয়াসাও জানিয়েছেন।

সাফাত সব সময় নাঈমের কথায় চলতেন বলে পিয়াসার ভাষ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈমের নিজের পাতায় সাফাতের বাড়িতে পারিবারিক আবহে ছবিতে তাকেও দেখা যায়।

অভিযোগকারী তরুণীদের দাবি, সেদিন রেইনট্রি হোটেলে নাঈম ও সাফাত ধর্ষণের পাশাপাশি তাদের নির্যাতনও করেন। পা ধরে নিস্তার চাইলেও তারা ছাড়া পাননি।