সোমবার অভিযানের পর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান সাংবাদিকদের বলেছেন, তাদের এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ধর্ষণের মামলায় মালিকের ছেলের বিরুদ্ধে মামলার পর রোববার রাজধানীতে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় অভিযান চালিয়ে প্রায় তিনশ কেজি সোনা ও হীরার গহনা ‘আটক’ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
সোমবার গুলশান ২ নম্বর সার্কেলের সুবাস্তু টাওয়ারের বিক্রয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে ২১২ কেজি সোনা আটকের কথা জানান শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুবাস্তু টাওয়ার বিক্রয়কেন্দ্রে থেকে ২১২ কেজি সোনা পাওয়া গেছে, যার মূল্য প্রায় ৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ কেজি সোনার তথ্য প্রমাণাদি দেখাতে পেরেছে তারা।”
বনানীতে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবা দিলদার আহমেদ আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক। এই পরিবারের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে তদন্ত চালাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
শুল্ক কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, “আমরা এই ডায়মন্ড ও সোনাগুলো তাদের জিম্মায় দিয়ে আসছি এবং দোকান সিলগালা করে দিয়েছি। তারা বলছে, বাকি কাগজগুলো ১৭ তারিখের মধ্যে দেখাতে পারবে।”
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান, স্বর্ণ ও রত্ন সংগ্রহের তথ্যে অস্বচ্ছতা এবং মালিকের ‘অবৈধ সম্পদের’ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবেই শুল্ক আইনের বিধান অনুসারে ওই অলঙ্কার তারা ‘আটক’ করেছেন।
‘ব্যাখ্যাহীনভাবে’ সোনা ও হীরার গয়না মজুদের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের মালিকদের তলবও করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। আগামী ১৭ মে বেলা ১১টায় তাদের কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সদরদপ্তরে কাগজপত্রসহ হাজির হতে বলা হয়েছে।
এদিকে আপন জুয়েলার্সে শুল্ক গোয়েন্দাদের এই অভিযানকে হয়রানিমূলক দাবি করে তার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি।
আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদারের ছেলে সাফাত ও তার বন্ধুরা গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করে অভিযোগ তুলে গত ৬ মে থানায় মামলা হয়।
রোববার রেইনট্রি হোটেলে অভিযান চালিয়ে মদ উদ্ধারের পর ওই হোটেলের মালিকদেরও তলব করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।
সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে নাঈম আশরাফ (আসল নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম) এখনও পলাতক।
এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে সাফাত ও নাঈম দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছিলেন। অন্য তিনজন ছিলেন সহায়তাকারী।
সাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ পিকাসো রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক ও রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে। আর বনানীর চার তারকা যে হোটেলে ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ, সেই রেইনট্রি হোটেলটি চালান ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের (বি এইচ হারুন) ছোট ছেলে মাহির হারুন।